Monday, June 22, 2020

পশ্চিমবঙ্গের করোনা লড়াই - 
জুন তো শেষ হতে চলল, কি অবস্থা ? 
(করোনা বিজ্ঞানের খুচরো খবর - ১১)


ইংরিজিতে একটা কথা আছে -  the other side of the river is green. সোজা কথায় 'ওদের ওদিকে সব ভাল, আমাদের এদিকে সব খারাপ'। করোনা নিয়েও একই কথা চলছে।  নিজেরাই চিন্তিত হয়ে বলছি 'খুব করোনা ছড়াচ্ছে, কি যে হবে?' আবার যেহেতু যে কোন সমাজের একটা বড় জিনিস হল self-contradiction বা  নিজস্ব-বিরোধিতা ওই হাহুতাশ করার পরমুহূর্তে নিজেরাই অনেকে মাস্ক না পরে বা থুতনি'র কাছে পরে করোনা ছড়াতে 'সাহায্য করছি' ।আবার পরের দিন 'কাগজ বা খবর দেখতে দেখতে হায়-হায়  করছি, 'আজ আরও করোনা ছড়িয়েছে' ।  

করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা যে দেশে ভালোই বেড়ে চলেছে, এবং ভারত যে 'জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লভের' দিকে দ্রুত এগোচ্ছে সেটাও আমাদের অজানা নয়। তবে সে  সব পরিসংখ্যান নিয়ে বেশ কিছুটা লেখা হয়েছে। এখানে আমরা দেখার চেষ্টা করছি জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এসে আমাদের রাজ্যের কি অবস্থা। কারণ একটাই - তার সঙ্গেই আমাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সবচেয়ে বেশি জড়িত।

আসুন, পশ্চিমবঙ্গে covid-১৯ পরিস্থিতি কেমন, উন্নতি হল না অবনতি , সেটা একটু দেখা যাক।  

প্রশ্ন: আমাদের রাজ্যের হাল কি সবচেয়ে খারাপ? 
উত্তর: উত্তর যে 'না' সেটা আমাদের অজানা নয়।  দুর্ভাগ্যবশত, মহারাষ্ট্র, গুজরাট দিল্লী ও চেন্নাইবাসীরা আজ আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বিপদে পড়েছেন সেটা আমরা মোটামুটি জানি।  তাও, যদি মে আর জুন মাসের পরিসংখ্যান গ্রাফ এঁকে দেখাই তাহলে এইরকম দেখাবে।  

নীচে দেখুন।  X-axis হচ্ছে সময় - অর্থাৎ ৪ঠা মে থেকে ১৯শে জুন অবধি 'দিনলিপি'।  আরY-axis হচ্ছে  3-day average for positives/tests % , অর্থাৎ দিনে কত টেস্ট হল আর তার মধ্যে কজনের করোনা ধরা পড়ল তার percentage. এই percentageর ফলাফল দেখতে হবে কারন স্বাভাবিক ভাবে সারা দেশের দৈনিক টেস্ট সংখ্যা এবং আক্রান্ত সংখ্যা এই রাজ্য (বা যে কোন রাজ্যের) তুলনায় অনেক বেশি হবে, সুতরাং তুলনা করার মানে হয় না ।  শুধু তাই না, দিনকে দিন আক্রান্তের সংখ্যা কিরকম বাড়ছে বা কমছে বা একই রকম থাকছে তার একটা ভাল আন্দাজ পাওয়া যায় এইpercentage থেকে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এখানে তিন দিনের এভারেজ পরিসংখ্যান দেখাচ্ছি।ধরুন, গ্রাফে প্রথম পয়েন্ট হল ১৬, ১৭, ১৮ই মে'র এভারেজে; দ্বিতীয় পয়েন্ট হল ১৭, ১৮, ১৯ মে'র এভারেজ। এরকম করে চলতে থাকে।  তাতে যে দৈনন্দিন noise কমে যায়, trend বুঝতে সুবিধে হয়।  এই দেখুন গ্রাফ।



ভারতের  positives/tests ratio যে মোটের ওপর বেড়েই চলেছে সে তো পরিষ্কার।  আর পশ্চিমবঙ্গ? যেটা  লক্ষণীয় সেটা হল যে মে মাসের গোড়ার দিকে রাজ্যের এই এভারেজ positives/tests % সমগ্র ভারতের %র মাথায় মাথায় বা অল্প বেশি ছিল !  কিন্তু, তারপর রাজ্য যখন এপ্রিল মাসের 'ল্যাদ খাওয়া' ছেড়ে অনেক বেশি টেস্ট করতে শুরু করে এই %ও উন্নতি করতে থাকে (অর্থাৎ কমতে থাকে) এবং ভারতের ratio বাড়তে থাকলেও মে মাসের মাঝামাঝি এই রাজ্যের % যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছিল দেখাই যাচ্ছে। এর থেকে দুটি ব্যাপার conclude করা যেতে পারে।  এক, পশ্চিমবঙ্গে আগে  মূলত রুগী তাঁর কাছাকাছি যাঁরা আছেন তাদের পরীক্ষা হচ্ছিল। তাই পসিটিভ বেশি ছিল আর ratio বেশি হচ্ছিল । কিন্তু, মে মাস থেকে আক্রান্ত খোঁজার জন্যে টেস্ট আরো বাড়ানো হয় এবং দেখা যায় যে অনেকের জ্বর সর্দি কাশি হলেও তিনি নতুন করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত নন, রেসাল্ট নেগেটিভ আসছে আর ওই % কমতে শুরু করে। আর তাছাড়া,  যত টেস্ট হবে তত আক্রান্ত ধরা পড়বেন তত তাঁদের চিকিৎসা বা কোয়ারেন্টাইন হবে, রোগের ছড়িয়ে পড়া আটকাবে - সোজা হিসেবে। একটু দেরি করে হলেও, রাজ্য যে সেই পথে দেড় মাসের বেশি এগিয়েছে দেখে ভাল লাগল। 
 (এই গ্রাফে আবার ফিরে আসব। দরকার আছে)  

প্রশ্ন: ভারতের positives/tests % কেন বাড়ছিল? 
উত্তর: কারন মহারাষ্ট্র, গুজরাটের, তামিল নাড়ুও দিল্লীর positives/tests % অনেক ওপরের দিকে।  তাই কেরল বা উড়িষ্যা বা পশ্চিমবঙ্গ কমের ওপর থাকলেও জাতীয় positives/tests % অনেক বেড়ে যাচ্ছে।  যেমন এই গ্রাফে ধরা পড়ছে  গুজরাটের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তুলনামূলক বিচার।গুজরাটের positives/tests % যে গত দেড় মাস ধরে অনেক বেশি সেটা তো পরিষ্কার। আমার ধারণা মহারাষ্ট্র বা দিল্লীর পরিসংখ্যান  গ্রাফে দিলে গুজরাটের তুলনায় বেশি তবু কম হবে না।  

 গুজরাটবাসীকে ছোট করে দেখানো আমার লক্ষ্য নয় ;প্রসঙ্গত বলে রাখি, জীবনের  গুরুত্বপূর্ণ দুটি বছর আমি গুজরাটে কাটিয়েছি। বহু বন্ধু গুজরাটি, এবং আজ তাদের জন্যে, তাদের বাবা মা'র জন্যে আমি বেশ চিন্তিত। কিন্তু, বহু প্রচারিত 'গুজরাট মডেল' যে বিপদের দিনে চিকিৎসাক্ষেত্রে কাজের নয় সেটা দেখাই যাচ্ছে।   

প্রশ্ন: গুজরাটের অবস্থা যে খারাপ সে তো আমরা জানি।যে সব রাজ্য covid-১৯কে ভাল ট্যাকেল করেছে বলে খবর আসছে তাদের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা কি? 
উত্তর: কেরলকে ধরছি না - ওঁরা যা করেছেন তা এক কথায় অনন্য, দেখবেন ভবিষ্যতে মেডিকেলের পাঠ্যপুস্তকেও কেরলের রোগ-প্রতিরোধ লড়াই'র স্ট্রাটেজি স্থান পেতে পারে। এক্ষেত্রে উড়িষ্যা ও কর্ণাটক - এমন দুটি রাজ্য যাঁরা কোরোনাভাইরাসকে যথেষ্ঠ ভাল আটকেছেন বলে খবর আছে - তাদের সঙ্গে এই রাজ্যের পরিসংখ্যান পাশাপাশি ফেলে দেখা যাক।আর আছে বিহারের পরিসংখ্যান। বেশি কথায় কাজ নেই, আবার গ্রাফ । 



উড়িষ্যা আর পশ্চিমবঙ্গ যে মোটামুটি একই positives/tests% দিচ্ছে দেখতেই পারছেন।কিন্তু দুই রাজ্যের ট্রেন্ড বা সার্বিক লক্ষণ যে একই সেটা অনস্বীকার্য। জাতীয় গড় %র অনেক তলায়। আর কর্ণাটকের অবস্থা এই দুই রাজ্যের তুলনায় একটু better.  বিহার একসময় খুব বেশি পসিটিভ ধরা পড়ছিল কিন্তু এখন দেখছি কমে কমে উড়িষ্যা আর পশ্চিমবঙ্গের তলায় চলে গিয়ে কর্ণাটকের লাগোয়া। ..... 

মূল আশস্থকর কথা - পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা সব রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ, এটা ভয়ানক  গাঁজা এবং মনে করার কোন তথ্যভিত্তিক কারণ নেই। বরঞ্চ, কেরলের মত না হলেও উড়িষ্যা ও কর্ণাটকের মত covid ঠেকানোয় পারদর্শী রাজ্যের সমগোত্রেই পড়বেন এ রাজ্যের চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীরা।
আর এসব দেখেও কেউ যদি কেউ বলেন যে এই সব তথ্য ভুল তাহলে প্রথম প্রশ্নই হবে অন্য কোন বিজ্ঞান-ভিত্তিক জাতীয় স্তরে প্রকাশিত পরিসংখ্যান  আপনার হাতে আছে ? তখন কিন্তু ঠিকঠাক উত্তর দিতে হবে।তখন  'ওসব বাজে কথা' 'জানি জানি আমরা জানি' হোয়াটস্যাপ-বাতেলা মারলে চলবে না।  

প্রশ্ন: এমনও তো হতে পারে পশ্চিমবঙ্গ ওই দুই রাজ্যের তুলনায় কম টেস্ট করছে বলে মনে হচ্ছে ওদের মত অবস্থা।  আসলে অনেক খারাপ? 
উত্তর: না।  এই প্রশ্ন আমার মনেও এসেছিল কিন্তু তারপর পরিসংখ্যান দেখে আমি নিজেই অবাক।  কারণ ১৬ই মে থেকে ১৯শে জুন, এই চৌত্রিশ দিনে (যা ওই গ্রাফের সময়-পরিধি ) 
পশ্চিমবঙ্গে টেস্ট হয়েছে 303,324 (average 8921 tests per day), 
উড়িষ্যায় টেস্ট হয়েছে 130,467 (average 3837 tests per day),
বিহারে টেস্ট হয়েছে 101, 222 (average 2977 test per day)
 গুজরাটে টেস্ট হয়েছে 175,900 (average 5173 tests per day) আর 
কর্নাটকে টেস্ট হয়েছে 344,036 (average 10, 118 tests per day) . 
অর্থাৎ বিহার, উড়িষ্যা ও গুজরাটের থেকে দৈনিক টেস্ট সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ অনেক এগিয়ে এবং মোটামুটি কর্ণাটকের কাছাকাছি।  

এ বেশ বড় সাফল্য। যে রাজ্য এপ্রিলের শেষে দিনে ১০০০-১২০০ টেস্ট করছিল সেই রাজ্য গত এক মাসের বেশি দৈনিক ৯০০০ মত টেস্ট করেছে (সাইক্লোনের দুদিন বাদ দিলে - তখন ৪০০০-৫০০০ হয়েছিল) এবং গত দুদিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দশ হাজারের বেশি পরীক্ষা হয়েছে। এর প্রধান কারণ নিশ্চয়ই টেস্ট ল্যাব বাড়ানো।  ৪ঠা মে রাজ্যে টেস্ট করার ল্যাব ছিল ১৬টি, আর আজ ২১শে জুন সেই সংখ্যা হল ৪৯. তিনগুন বৃদ্ধি।  শুধু তাই নয়, খবর পেয়েছি যে প্রতি জেলায় টেস্ট সেন্টার তৈরির কাজ বেশ কিছুটা এগিয়েছে কিংবা টেস্ট শুরু হবার মুখে। অবশ্য,  contact tracing কতদূর হচ্ছে সেটা এইসব তথ্য দেখে বোঝা যাবে না, কিন্তু টেস্ট সংখ্যা এত বাড়ানো তো ভাল বলতেই হবে।  (পার্টিগত রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকলে অন্য ব্যাপার....) 
সবচেয়ে বড় কথা, এই পরিসংখ্যান অনেকাংশে ওই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।  না, কম-টেস্ট-তাই-কম-পসিটিভ এই ব্যাপারটা আর সেভাবে এই রাজ্যের ক্ষেত্রে খাটে না. বরং, এখন উল্টে প্রশ্ন করা যেতে পারে বিহার, উড়িষ্যা বা তেলেঙ্গানা কম টেস্ট করছে কেন?  
শুনেছি যে উড়িষ্যার contact ট্রেসিং খুবই ভাল।  হতেই পারে, আর তাছাড়া জনসংখ্যা তেমন বড় না।  তাই কম টেস্ট করে হয়ত চলতেই পারে।  কিন্তু, বিহার ? বিহারের জনসংখ্যা ১১.৯৫ কোটি আর পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা তার থেকে ২.২ কোটি কম।  অথচ, ওঁদের ওখানে টেস্ট হচ্ছে গড়ে পশ্চিমবঙ্গের এক তৃতীয়াংশ । সুতরাং,একটা 'খচখচ' থেকেই যাচ্ছে।

এটা ঠোকার জন্যে বলছি না , বলার মূল কারণ হল বিহার এবং উড়িষ্যা'র সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নিবিড় আর্থসামাজিক যোগাযোগ । এই দুই রাজ্যের বহু নাগরিক কর্মসূত্রে এখানে থাকেন, লকডাউনের সময়ে ফিরে গেছেন এবং এখন আবার ফিরে  আসছেন। তাছাড়া সমগ্র পূর্ব ভারতে বহু পরিযায়ী শ্রমিক ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ভিড় ট্রেনে ফিরেছেন। অগণিত গ্রাম শহর শহরতলি গঞ্জে তাঁরা মিলিত হচ্ছেন। নিজেদের রাজ্যে  টেস্ট পর্যাপ্ত না হলে তাঁরা যখন পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসবেন তখন কিন্তু asymptomatic carrier বেড়ে যাবার আশঙ্কা থাকছে।  এই ব্যাপারে আমাদের রাজ্যকে সর্বস্তরে বৈজ্ঞানিক মতে সতর্ক হতে অনুরোধ করছি। 'ও কিছু হবে না' ভাবার সময় আসতে এখন বহু দেরি।  

অবশ্য, এ কথা স্বীকার করতেই হবে initial dilly-dally কাটিয়ে এই রাজ্য বেশ কিছুটা চেষ্টা করেছে এবং সেই জন্যেই আজ করোনা আক্রান্তদের  মধ্যে মৃতের সংখ্যাও কমেছে।  গোড়ার দিকে যতজন আক্রান্ত হচ্ছিলেন তাঁদের ১০% র বেশি মারা যাচ্ছিলেন! এটি একটি বিশাল সংখ্যা এবং বেশ আতঙ্কের কারণ ছিল। আজ কিন্তু সেই অবস্থা উল্লেখযোগ্য ভাবে বদলেছে।  গ্রাফ দেখুন। মে আর জুন মাসে ভারতের আর পশ্চিমবঙ্গের mortality rate (১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে কতজন মারা গেলেন). পশ্চিমবঙ্গের ডাক্তার ও স্বাস্থ কর্মীদের সাধুবাদ দিতেই হবে।  অনেক অসুবিধের মধ্যে তাঁরা আজ মৃত্যুহার কমাতে অনেকাংশে সফল।  

In fact, গতকাল (২১শে জুনের ) মৃত্যুহার দেখলে বোঝা যাবে আরো উন্নতি করেছে এবং এখন পশ্চিমবঙ্গের mortality rate  (৩.৯৯%). তুলনামূলক ভাবে দেখলে মহারাষ্ট্রে এই হার ৪.৬৭%, মধ্যপ্রদেশে ৪.৩৩%, গুজরাটে ৬.০৯% আর দিল্লীতে ৩.৬৪%.  আবার উল্টোদিকে কর্ণাটক (১.৫%), উড়িষ্যা (০.৩৭%)  সাফল্য উল্লেখযোগ্য।   

পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুহার কেন বেশি ছিল (বা এখনো আছে) সেটা একটা প্রশ্ন বটে।  উত্তর আমার জানা নেই, আর হাতে সেরকম ডিটেল পরিসংখ্যান ও নেই।  তবে লক্ষণীয় যে যে ৫৫৫ মারা গেছেন তাঁদের ৪১৩ (অর্থাৎ ৭৪% ) কলকাতা আর উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা - তার মধ্যে সল্টলেক আর রাজারহাট নিউ টাউন অঞ্চল, পড়ছে ।  হাওড়ায় আরো ৭৫ জন। আর কলকাতা, সল্টলেক, রাজারহাট নিউটাউন অঞ্চলের একটা বড় সংখ্যক নাগরিক যে বয়স্ক সেটা তো অজানা নয় - সেই জন্যেই তো অনেকে আজকাল কলকাতাকে 'পুরো শহরটাই তো old age home' বলে থাকেন ; এবং করোনা যে বয়স্কদের পক্ষে (বিশেষত যাদের অন্য কোন অসুখ আছে তাঁদের পক্ষে) বেশি  মারাত্মক সে তো সবাই জানি। সেটাই কি এইসব অঞ্চলে মৃত্যুহার বেশি হবার কারণ? সেই জন্যেই কি পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক মৃত্যুহার বেশি? হতে পারে .....

আগের তুলনায় মৃত্যুহার কমেছে কেন? 
আগের ব্লগে যা লিখেছিলাম তাই এখানে আবার তুলে দিচ্ছি - সম্ভবত দুটি কারণ - এক, আগে পরীক্ষা মূলত রুগী (এবং গুরুতর অসুস্থ রুগী) এবং তাঁর কাছাকাছি যাঁরা আছেন তাদের টেস্ট হচ্ছিল; তাই positive to death conversion বেশি ছিল।  এখন সামাজিক লেভেলে টেস্ট বেড়ে যাওয়াতে (এবং যেহেতু এই অসুখের ৮০%র বেশি এমনিতেই সেরে যান, ৯০%র বেশি হাসপাতালের ধারেকাছেও যেতে হয় না - এটা ভুললে চলবে না ) করোনা'য় মৃতের টোটাল সংখ্যা বাড়লেও সেই rate নিম্নগামী। দুই,  তাছাড়া, একটি নতুন অসুখ এলে সেটার গতিপ্রকৃতি বুঝতে কিছুটা সময় তো লাগেই। স্বাভাবিক, এত ম্যাজিক নয় রে বাবা, মছলিবাবাও নয় ! তাই, মনে হয়, অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও রাজ্যের ডাক্তার ও স্বাস্থকর্মীরা এখন এই লড়াইয়ে আরো experienced হয়ে উঠেছেন।করোনা চিকিৎসার জন্যে নিয়োজিত বেড ও বেড়েছে - ৩১শে মে ৮৭৮৫টি বেড ছিল, আর এখন সেই সংখ্যা ১০৩৪০। তাই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত বেড আছে বলেই মনে হয়  (নীচে গ্রাফ দেখুন  - ৮০% মত বেড খালি পাওয়া উচিত; তবে কথা আর কাজে কতটা  ফারাক কি করে বলব ? ). 


প্রথম গ্রাফে ফিরে যাই।  আপনাকে স্ক্রল করতে হবে না , এই যে আবার দিয়ে দিলাম।  
মে মাসের গোড়ায় ratio বেশি ছিল, তারপর ভালোই কমছিল কমছিল কমছিল - ২০শে মে নাগাদ সর্বনিম্ন।  তারপর আবার বাড়তে আরম্ভ করল।  কি হল? আক্রান্ত কমে আবার বাড়তে আরম্ভ করল কেন? মনে করে দেখুন মে মাসের শেষের দিকে ঘটা দুটো কারণ প্রথমেই মনে আসে - এক, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা। আর দুই, সাইক্লোন উমপুন্।  
দেখুন, ছোটবেলায় একটা খেলা খুব চলত - স্ট্যাচু! যেই বলা হবে অমনি দাঁড়িয়ে পড়তে হবে, নো নড়ন চড়ন ! লোকডাউনও তাই।  যে যেখানে সে সেখান থেকে নড়বে না। এ শহর থেকে ও শহর, এ রাজ্য থেকে ও রাজ্য, এ দেশ থেকে ও দেশ যাতায়াত বন্ধ। বন্ধ মানে বন্ধ। তবে যে দেশের ৮০% লোক মাস গেলে স্টেডি মাইনে পান না তারা তো খালি পেটে বসে থাকতে পারেন না, তাই অভিজিৎ ব্যানার্জি'র উপদেশ ছিল যে সবাইকে পর্যাপ্ত খাবার এবং মাসের খরচ চালাবার টাকা দিতে হবে। 
হল না।  রেশন কিছুটা এলেও টাকা সেভাবে এল না ।  কোন কোন রাজ্য অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন নিজের তহবিল খরচ করে শ্রমিকদের যত্ন নেবার।  কিন্তু তারও তো একটা লিমিট আছে।  পশ্চিমবঙ্গ যেমন তার বকেয়া টাকা চাইছে অন্য সবাই ও তো চাইছে - পাচ্ছে না। কত করবে ? - সবারই তো নিজের  রাজ্যবাসীর কথা ভাবতে হবে আগে।  আর তার ওপর রেল-রাজ্য coordinate না হয়েই ভিড় ট্রেন চলতে আরম্ভ করল।কি আর বলবেন ? কথার কথা বলছি, একদিনে হয়তো ২০০০র শ্রমিকের টেস্ট করা যায়, থাকা খাবার ব্যবস্থা করা যায়, কিন্তু ১০০০০র যায় কি?  আপনাকে দায়িত্ব দিলে পারবেন? আমায় দিলে তো কাঁচকলা পারব। 

তার ওপর এল ঝড়। পরিযায়ী শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করতে অবস্থা টাইট, তারপর কয়েক কোটি বাঙালি ঘোর বিপদে পড়লেন।  সব মিলিয়ে যা হল ভাইরাসের যদি বোধবুদ্ধি থাকত তাহলে তো আনন্দে লাফাত,' লটারি পেয়েছি লটারি'!  

আর তাই আবার পরের গ্রাফগুলো দেখি। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কবে থেকে কতটা বাড়ল আক্রান্তদের সংখ্যা।  
একটা গ্রাফে সব জবরজং হয়ে যাবে বলে ৪টি গ্রাফ করেছি। আর কোনো কারণ নেই।  

প্রথম গ্রাফেই কলকাতা, হাওড়া ২৪ পরগনা।  আক্রান্ত মে মাসের গোড়া থেকেই যথেষ্ঠ। সে তো জানি - এপ্রিলেই বেশি ছিল।  

compare করুন উত্তরবঙ্গর সাত জেলা  ও মালদা,  মুর্শিদাবাদ , নদীয়া, বীরভূম, বাঁকুড়ার সঙ্গে।  প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা ২২ থেকে ২৭র মে'র পরেই বাড়তে আরম্ভ করছে।  

একই কথা প্রযোজ্য মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া , বীরভূম সবার জন্যে।  মে মাসের মাঝামাঝি অবধি নগন্য, ২২-২৭ মে'র পর থেকেই সংখ্যা বাড়ছে।  

ভাল কথা, যে হুগলি ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলা এখনো যথেষ্ঠ কম।  

নজর করতে ভুলবেন না যে কলকাতা হাওড়া গ্রাফের Y-axis অনেক বেশি।  হাজার-দুহাজার-তিন হাজার।  অন্য জেলাদের ক্ষেত্রে সেটা এখনো ২০০-৩০০-৪০০.

তাহলে সব যোগ করে কি দাঁড়াচ্ছে - কলকাতা হাওড়া গোড়া থেকেই বেশি।  অস্বাভাবিক নয়।  যেখানেই যাতায়াত বেশি, জনসংখ্যার ঘনত্ত বেশি সেখানেই বেশি - যেমন মুম্বই, দিল্লী, আমেদাবাদ, চেন্নাই (ফেব্রুয়ারি মাসে সব এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দিলে কি এই দুর্দিন আজ আসে??) .  কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের বহু জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে মে মাসের শেষ থেকে।  এর সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার যোগাযোগ থাকার ভালোই সম্ভাবনা।  তার মানে ঠিক যখন এই রাজ্য টুকটুক করে হলেও কোরোনাকে একটু বাগে আনছিল, তখনই কেসটা কেঁচে গেল।  আর তাছাড়া, আমার ধারণা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংখ্যা আরো বাড়বে আগামী দিনে। উমপুন্ ঝড়ে যে ভয়ঙ্কর ভাবে রাস্তাঘাট-জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার প্রভাব টেস্ট ও চিকিৎসার ওপর পড়তে বাধ্য।  আর তাছাড়া জেলায় জেলায় টেস্টিং সেন্টার পুরোদমে কাজ করতে শুরু করলে সংখ্যা কিছুটা বাড়বে।  স্বাভাবিক। 

প্রসঙ্গত, ওপরের গ্রাফে যেটা নজরে পড়ে সেটা হল উড়িষ্যার %ও কিন্তু মে মাসের শেষে বাড়তে আরম্ভ করেছে।  কারণ সম্ভবত একই - পরিযায়ী শ্রমিক।  বিহার অবশ্য কমেছে। সেটা সাফল্য হতেই পারে।  কিন্তু কি করে? বহু পরিযায়ী শ্রমিক তো বিহারে  ফিরেছেন, তাই না ? এর সঙ্গে কম টেস্টের কোন যোগ আছে কি?  .....টেস্ট সংখ্যা আরো অনেক বেশি হলে নিশ্চিত হওয়া যেত।  

শেষের কথা: 
তবে এসবে তো ভিরমি খাবার কিছু হয়নি। অসুখ যদি হয় ও, নিয়ম মেনে চললে, ৯৫% র বেশির যে সেরে যাবেই সে তো দেখায় যাচ্ছে। বিপদের দিনে বাঙালি হয়ে বাঙালির পাশে না দাঁড়ালে আমরা সবাই এতদিন কি রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-চিত্তরঞ্জন-বিবেকানন্দগিরি করলাম ?  তবে হ্যাঁ, কাজটা আরো অনেক কঠিন হয়ে গেছে।  সে তো গেছেই।  দুম করে ব্যবসাপত্র রোজগার সব তুলে দিয়ে , লক্ষ লক্ষ লোক ভিড় ট্রেন বা কয়েকশো মাইল হাঁটছেন - টোটাল unplanned ভাবে এভাবে ছড়িয়ে লাট না করলে ভারত আজ 'করোনা কাপের' শেষ চারে উঠে যায় ??!! 


পশ্চিমবঙ্গ যে এখনো কমের ওপর আছে সে তো দেখাই যাচ্ছে। কে জানে? হয়তো এত দোষের মধ্যেও আমাদের critical attitude রাজ্যকে কিছুটা সাহায্য করেছে। আশা করছি আহমেদাবাদ মুম্বাই দিল্লী র মত অবস্থা এখানে হবে না - জানি না  ...... তবে একটা কথা বলে শেষ করি।  গতকাল রাত্রে একটা মজার খবর পড়লাম।  গত দু তিন সপ্তাহ আমেরিকায় যে প্রচুর বর্ণবিদ্বেষ আন্দোলন হচ্ছে সবাই পড়েছি।দারুন, হওয়া উচিত। তবে ,অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে  এইসব মার্কিন মিছিল মিটিংয়ে র জন্যে করোনা বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে।  কারণ, মিছিল মিটিং মানেই তো ভিড়।  কিন্তু, সর্বশেষ তথ্য দেখে মনে হয় না মিছিল মিটিংয়ের জন্যে নতুন করে রোগ ছড়িয়েছে।  মানে, আমেরিকায় তো করোনা মহামারী পুরোদমে চালু আছে, কিন্তু মিছিল মিটিংয়ের জন্যে সেটা আর নতুন করে বাড়েনি।  
মানে, হিসেব মত বাড়ার কথা কিন্তু বাড়েনি।  কি করে হল? ফেলুদার কথায়, 'যা খুঁজছিলাম  তা পাইনি, এবং সেটাই সিগনিফিকেন্ট'।বিজ্ঞানীরা তাই খুঁটিয়ে দেখেছেন। এবং একটা সহজ সরল সত্য আবার সামনে এসেছে - ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রতিবাদ মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীরা প্রায় সবাই ভাল করে, যত্ন করে মাস্ক পরেছিলেন। এটাই অবশ্য শেষ কথা নয়, কিন্তু করোনার সঙ্গে লড়তে মাস্ক যে আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তাতে কোন সন্দেহ নেই।  

দেখুন সোজা হিসেবে,  ভিড় বাস, ট্রেন,  ভিড় বাজার করতে আমাদের বেরোতেই হবে। অভিজিৎ বাবুর কথা মেনে যদি (সুইস ব্যাঙ্ক থেকে ১৫ লাখ না হোক) নিজেদের RBI থেকেই টাকা পাওয়া যেত তাহলে হয়ত আমাদের কম বেরোতে হত, কিন্তু সে তো আসেনি, আসবেও না মনে হয়। হাতে আছে মাস্ক। মাস্ক মাস্ক মাস্ক।  এ ছাড়া গতি নেই। AIDS মহামারী রুখতে যেমন কন্ডোম, করোনা মহামারী থেকে বাঁচতে তেমন মাস্ক।  মাস্ক ভালো করে পড়তে হবে, রেগুলার পড়তে হবে, বাড়ি ফিরে সাবান দিয়ে কেচে দিতে হবে , আর হাতে হেলমেটের মোট থুতনিতে মাস্ক পরে কেত মারলে চলবে না।
বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল SCIENCEএ প্রকাশিত একটি ডায়াগ্রাম দিয়ে শেষ করি।  ভাল থাকবেন। মাস্ক পরবেন, পরতে বলবেন।  
  



তথ্য: 


Friday, June 12, 2020

OUTRAM, NETAJI AND THE HORSE 

The recent outburst in the USA and Europe for removing and branding statues of (in)famous people - Edward Colston, Winston Churchil, Robert Milligan, Leopold II - whose actions associate themselves well with racism and colonization reminds of an factoid from the not-so-old history of my city, Calcutta. Its the tale of a statue that was removed and one that came up later.

Ask any Calcuttan, 'Heard of Outram?' and the most-likley answer will be 'Outram? after whom outram ghat is named?' Yes. One of the city's old riverbank ghats is named after the now almost-forgotten Outram. Who was he?

Well, General James Outram was one of the British icons of the 19th century. A noted military commander and colonial administrator (who didn’t hesitate to expose corruption of british officials!) , he played an important part in expanding British rule in the subcontinent in the 1840s-50s. He had a decisive role in the annexation of Sindh and later of Awadh (remember Sir Richard Attenborough's superb performance in Satyajit Ray's Shatranj ke Khiladi?' thatz Outram) .

 But, what endeared Outram to the British people was his decisive role in turning the tide of the 1857-rebellion. As the British desperately tried to restablish their rule, Outram was one of their most successful generals, especially at Lucknow. It was he who forced Nana Saheb to retreat - a decisive step that finally led to British victory. That wasn't all. By mid-1858, Outram's army had chased the Indian rebels all over central India and practically broken the back of the resistance.

The British weren’t hesitant in acknowledging his contribution to their profits. They commissioned the noted sculptor John H. Folli to build an equestrian statue in his honour. Thus, in 1874, General Outram - seated on his stallion- was installed at their ‘2nd capital of the empire’, Calcutta – at the junction of Chowringee Road and Park Street, close to his once-headquarters at Fort William and not far from the city center of Esplanade.
And there he stood (or galloped) for more than 70 years. Till 1947.



But colonialism had ended and so it was time for its icons to go too, at least from public view. In the 1950s, the WB government embarked on a ‘serious’ decolonization initiative after independence and several ‘firangi’ statues that dotted Calcutta were removed. Outram too was un-seated and by none other than the Mahatma, whose statue came up there in 1958 (today, of course, the same Gandhi has been placed at the Mayo Road-Dufferin Road junction).



All that is patriotic and very fine. But, now comes a bit of desi remix. and a rather awkward one.
In 1967, the Calcutta Corporation (today CMC) was decided to honour the city’s most charismatic hero (and ex-Mayor), Netaji Subhas Chandra Bose. And, at the northern part of the city, at the 5-roads junction called Shyambazar Crossing, they erected an equestrian statue in his honour. Now, thatz doubly-good and should make our chests pump up beyond 56 inch. The only trouble is that, for reasons unknown, sculptor Nagesh Jogalkar made a direct copy of the Outram-on-horse statue!!!??

I personally think the Netaji statue itself is a rather unaesthetic one. Its location is rather 'ugghh' too, especially with the cobweb of tram cables all around. And the horse’s gravity-defying tail is a marvel of physics!!!!



But, besides all that, the spirit of Netaji must be quite sad that, after a lifelong struggle against the British empire, his statue had to be made identical to a colonial general! We Indians....aahhhhh!!!

PS: As for Outram, he was transferred to the premises of the Victoria Memorial – thus continuing to serve his Queen. And there he now stays, in quiet neglect, but providing a bit of space to those who have found love and warmth in the fast-moving metro.



(ref: Debraj Goswami’s post at fb https://www.facebook.com/groups/admin54/permalink/1449690395095724/;
pics: google, https://www.telegraphindia.com/culture/therein-hangs-a-tail/cid/1729181 )

 স্কুল খুলুক, সঙ্গে হাওয়া বাতাস খেলুক ক্লাসঘরে ('এই সময়' সংবাদপত্রে প্রবন্ধ -  ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২১)      সোজাসাপ্টা অপ্রিয়   সত...