Thursday, April 16, 2020

সবাই যে 'টেস্ট' 'টেস্ট' করছেন,  কোরোনাভাইরাসের পরীক্ষায় কি করা হয়? 
(চলিত বাংলায়, আড্ডার ছলে...  করোনা বিজ্ঞানের খুচরো খবর - ৫) 


নন্দন: কি রে ব্যাটা, কি করছিস?

চন্দন : এই আর কি.... কাগজ পড়ছি  ....

নন্দন: মুখটা এমন ব্যাজার কেন? চায়ের দোকানের আড্ডা বন্ধ তাই মুড অফ?

চন্দন: সেটা কিছুটা ঠিক বলেছিস।...সামনাসামনি ভাট মারার একটা আলাদা ফিলিং আছে, সেটা ঠিক অনলাইন হয়েও হয় না   .....তাছাড়া  ....

নন্দন: তাছাড়া  ....?

চন্দন: আচ্ছা, এই টেস্ট জিনিসটা কি বলতো? মানে, এই করোনোভাইরাসের যে টেস্ট হচ্ছে  ....বেলেঘাটার হাসপাতালে। ...খুব কথা হচ্ছে টেস্ট নিয়ে  ....এতে করে কি? রক্ত নিয়ে মাইক্রোস্কোপে দেখে ?

নন্দন (কোনো কাজ নেই, তাই জ্ঞান দেবার চান্স পেয়ে একটু খুশি) : না রে।  ভাইরাস বড্ড ছোট।  এমনি মাইক্রোস্কোপে দেখাও  যাবে না , ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ চাই, কিন্তু এই পরীক্ষায় সে সব লাগে না  ...

চন্দন: তাহলে ? ...

নন্দন: হুম  ....দেখ, আমি একটু সোজা করে বলার চেষ্টা করব , বেশি টেকনিক্যাল জিনিসে ঢুকবো না, কিন্তু তোকে মন দিয়ে শুনতে হবে  ....এখন হোয়াটস্যাপ নিয়ে ঘুটঘুট বন্ধ রাখবি , রাজি ?....

চন্দন: আচ্ছা (এইটা সত্যি জানার ইচ্ছে, মেসেজ না হয় কষ্ট করে পরে দেখা যাবে ) : আচ্ছা, তুই বল. আমি কোন জায়গা না বুঝলে তখনই জেনে নেব।

নন্দন: তাহলে একদম গোড়া থেকে শুরু করা যাক।  জিনিসটা কিন্তু মোটামুটি আমাদের এখনকার ক্লাস ১২র বইতেও কিছুটা পাবি। ....তবে কিছুটা সমন্বয় করতে হবে। ....আচ্ছা, তুই বল, এই টেস্টে যে প্রযুক্তিটা ব্যবহার হয় তার নাম জানিস?

চন্দন: হ্যাঁ  ....এই তো পড়লাম ....PCR না কি যেন ...

নন্দন: হ্যাঁ , PCR বা পলিমারেজ চেন রিয়াক্সন।  তবে একটা বিশেষ ধরণের PCR যার পুরো নাম রিয়েল টাইম রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ PCR . ছোট কথায় real time RT -PCR

চন্দন: ওরে বাবা! দাঁত খুলে যাবে। ...

নন্দন (ছাত্র পালিয়ে গেলে আর জ্ঞান দেওয়া যাবে না, তাই ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো): আরেঃ ধুস।  সোজা উচ্চারণ real time RT -PCR , আর তাছাড়া দেখবি বিজ্ঞানের মজা হচ্ছে প্রতিটা শব্দের মধ্যেই পুরো টেকনিকটায় কি হয় সেটার আন্দাজ যাওয়া যায়।  পরে নিজেই বুঝতে পারবি। আচ্ছা, একটা কথা বল, খড়ের গাদায় একটা single ছুঁচ খোঁজা সোজা ?  না কি  সেই একই খড়ের গাদায় ছুঁচের একটা বড় বান্ডিল খোঁজা সহজ?

 তাই না?

চন্দন:  অবশ্যই ওই ছুঁচের বান্ডিল খোঁজা সহজ।

নন্দন: exactly. PCR এইটা করতে সাহায্য করে।

চন্দন: একটু খুলে বল প্লিজ

নন্দন: বলছি বলছি। ধর কারুর কোরোনাভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে সন্দেহ হল।  তখন একটা  cotton swab (ওই অনেকটা কান পরিষ্কার করার budর মত, তবে অনেক উন্নত কোয়ালিটির জিনিস ) দিয়ে তার নাকের ভেতর থেকে কিংবা গলার ওপর দিক থেকে একটু কোষ হালকা করে চেঁছে নিতে হয়।

চন্দন: লাগে না?

নন্দন: না না  ..... হালকা করে চট করে টেনে নেয়।  আর তখন swabএ ওই ব্যক্তির কিছু কোষ উঠে আসে।

চন্দন: লোকটার কোষ উঠে এল, তাতে কি হবে?

নন্দন: সেটাই তো starting point রে; যে সংক্রমিত তার কোষের মধ্যেই তো ভাইরাস থাকে।সেই  কোষের ঝিল্লি  (cell membrane) ফাটিয়ে ভাইরাস বের করতে হয়।

চন্দন: কেন? কোষ থেকেই কেন? রক্ত থেকে নিলে হবে না?

নন্দন: হবে না তা না, তবে মনে রাখতে হবে যে নতুন কোরোনাভাইরাস নিঃশ্বাস দিয়ে ঢুকে প্রথমে গলার কোষকে সংক্রমিত করে।  ওটাই ওদের মূল entry. গলার কোষের মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে ফুসফুসের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।  সুতরাং কোন ইনফেকশনকে প্রথমেই ধরতে চাইলে ওইভাবেই করা best.

চন্দন: আচ্ছা, ভাইরাস যদি কোষের মধ্যে না ঢোকে?

নন্দন: ধুস! আগেরদিন তোকে সেই লেখাটা পাঠালাম না? ভাইরাস হল পেনড্রাইভের মত।  পেনড্রাইভ এমনিতে কোনো data, সিনেমা দেখাতে পারে না। তাকে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের পোর্টে গুঁজে দিলে তবেই data কাজ হয়।   তেমনি , ভাইরাসও প্রাণীর কোষের বাইরে থাকলে বংশবৃদ্ধি করতে পারে না।  কোষে ঢুকলে তবেই সেই কোষকে সে হাইজ্যাক করে নিজের মত অনেক অনেক ভাইরাস বানাতে অর্ডার করে।

চন্দন: আচ্ছা, ভাইরাস বংশবৃদ্ধি করে কেন?

নন্দন : যে কারণে মানুষ বংশবৃদ্ধি করে  .....যাতে নির্বংশ  না হয়।  ভাইরাস বলে কি মানুষ নয়?!

চন্দন : আচ্ছা আচ্ছা বল। ...এর পরের স্টেপ বল।

নন্দন: সেই কোষ collect করে, ঠিকঠাক একটা বিশেষ solutionএ swab চুবিয়ে বিজ্ঞানীরা ল্যাবে ফিরে আসেন।  তারপর কোষের ঝিল্লি (cell membrane) ফাটিয়ে ভেতরে যত RNA আছে সব বের করে আনেন।

চন্দন: কি করে এটা করেন?

নন্দন: অত detailsএ তোর কাজ নেই, তবে বলে রাখি যে যেহেতু সেল মেমব্রেন, আর ভাইরাল এনভেলপ, ভাইরাল ক্যাপসিড এ সবই কিছু প্রোটিন আর স্নেহ পদার্থ (লিপিড) দিয়ে তৈরী, তাই Trizol নামের একটি বিশেষ সল্যুশন আছে যা দিয়ে এই সব প্রোটিন আর লিপিড গলিয়ে ভেঙে দেওয়া যায়।

চন্দন: কিন্তু, কোষের মধ্যে তো আরো অনেক জিনিস থাকে।  কোষের নিজের ক্রোমোসোম, তার মধ্যে DNA, তার পর কোষের অন্যান্য অংশ, মাইটোকন্ড্রিয়া, রাইবোসোম, আরো কত কি  - নিজের প্রোটিন, শর্করা, ভিটামিন সব তো থাকবে মিশে। সেগুলো?

নন্দন: ঠিক বলেছিস। প্রথমে যখন কোষের ঝিল্লি ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তখন শুধু RNA নয়, আরো সবকিছু  যেমন DNA , প্রোটিন, শর্করা, মিনারেল, ভিটামিন, ইত্যাদি  বেরিয়ে আসে। তবে সেটাই স্ট্রাটেজি। সব কিছু বেরিয়ে আসবে, আর তারপর RNA ছাড়া সবকিছু সরিয়ে দেওয়া হবে।  পরে থাকবে বিশুদ্ধ RNA .


চন্দন: কোন যন্ত্রপাতি লাগে না ?

নন্দন: লাগে, তবে খুব আহামরি কিছু না।  মূলত সেন্ট্রিফিউজ বলে একটা যন্ত্র লাগে।  সেটা আধুনিক সব ল্যাবেই থাকে, এমনকি অনেক কলেজের ল্যাবেও পাবি।  আর ক্রোমাটোগ্রাফি column লাগে।  একটা ছোট টিউবের মত, RNA বিশুদ্দ করতে।  এমনিতে সোজা টেকনিক, তবে খুব সাবধানে করতে হয়।

চন্দন: কেন? সোজাই তো মনে হচ্ছে।

নন্দন: সোজা।  তবে ভাইরাসটা খুব ছোয়াঁচে।  তাই একদম সব PPE mask গ্লাভস পরে করতে হয়।  তাছাড়া RNA জিনিসটা বড্ড পলকা। কোষের ভেতরে যতক্ষণ আছে ততক্ষন ঠিক আছে, বাইরে বেরোলেই ঝট করে degrade করে যেতে পারে, ভেঙে ঝুরঝুর হয়ে গেলো।তখন সব পরিশ্রম জলে গেল। তাই খুব সাবধানে হ্যান্ডেল করতে হয়।

চন্দন: এ তো বেশ চাপ  ....

নন্দন: হ্যাঁ , সেই জন্যে RNA নিয়ে কাজ করার সময় সব কিছু খুব বেশি ঝকঝকে পরিষ্কার বিশুদ্ধ রাখতে হয়। না হলে 'সে-যে  নাগাল পেলে পালায় ঠেলে, লাগায় চোখে ধাঁদা' . তবে পরের স্টেজেই  এই RNA থেকে DNA তৈরী করে ফেলা হয়, আর DNA নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা অনেক সোজা।

চন্দন : RNA থেকে DNA মানে? এই....এইটা আমার মনে আছে।  DNA থেকে RNA হয়, তাকে বলে সেন্ট্রাল ডগমা অফ মলিকুলার বায়োলজি এটা পড়েছিলাম। এখন তুই তো উল্টো বলছিস!?

নন্দন: দেখ, তুইও ঠিক বলেছিস, আর আমিও ঠিক বলেছি। এটা ঠিক যে যখন প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল তখন বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন যে একটা লম্বা DNA মলিকিউলের একটা অংশ থেকে RNA তৈরী হয় (যেন অরিজিনাল বই থেকে এক পাতা জেরক্স করলি) . তারপর সেই RNA ব্যবহার করে কোষের রাইবোসোম প্রোটিন তৈরী করে।  এটা আগে আবিষ্কার হয়।  পরে আবিষ্কার হয় যে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেস (Reverse Transcriptase) নামের একটি উৎসেচক (enzyme) আছে যেটা RNA থেকে DNA তৈরী করতে পারে। বিজ্ঞানীরা এখন সেই উৎসেচকটা ল্যাবে ব্যবহার করেন।

3'-GCACCAACAAAGGUUACUUUUGGUGAUGACACUG......UCAAAGUGCCAGCUACAGUUU (RNA )
5'- CGTGGTTGTT →  (ওপরের RNA থেকে তৈরী DNA)

চন্দন: ও, got it. DNA কপি করে  RNA তৈরী হল Transcription, আর RNA কপি করে DNA  তৈরী হল Reverse Transcription. প্রথমটা করে RNA পলিমারেস নামের উৎসেচক আর দ্বিতীয়টা করে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেস।

নন্দন: একশোয় একশো। যাক, তুই মন দিয়ে শুনছিস। good, thanks । হ্যাঁ ,   আর ওই রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেস (Reverse Transcriptase) ছোট করলে হয় RT, যেখান থেকে টেস্টের নাম RT-PCR .

চন্দন: আচ্ছা, এই রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেস-টা বিজ্ঞানীরা পান কোথায়?

নন্দন: সে অনেক কথা।  originally কিছু ভাইরাস থেকে পেয়েছিলেন।  তবে এখন বায়োটেকনোলজির যুগে ল্যাবে আর ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরী করা যায়। আর শুধু এটা না, এখন অনেক অনেক উৎসেচক পাওয়া যায়।  অনেক বিদেশী কোম্পানি আছে, এমনকি দেশি কোম্পানি আছে যারা বিক্রি করে।এসব খুব বড় ব্যবসা রে  ....

চন্দন: তাই বুঝি?

নন্দন: ও বাবা! ডলারের গল্প। বড় বড় কোম্পানিরা কত কিছু পেটেন্ট করে রেখেছে, সেইসব কেমিক্যাল, এনজাইম, কিট বিক্রি করে।  অনেক অনেক টাকার ব্যাপার  .....দেখছিস না এখন কিটের জন্যে কেমন হাহাকার  ....ফেব্রুয়ারি থেকে ভারত ব্যবস্থা করেনি বলে এখন টান পড়েছে  ....যাকগে, সে অন্য কথা।

চন্দন: হ্যাঁ, RNA বেরোল তারপর কি হল?

নন্দন: এইবার হচ্ছে পরপর দুটো রিয়াক্সন।  এক হল যেটা আগে বললাম - রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেস দিয়ে RNA থেকে কপি করে DNA করা হয়। এই বিশেষ DNAর বৈজ্ঞানিক নাম হল cDNA বা complimentary DNA. আর এই cDNA দিয়েই করা হবে real time PCR.

চন্দন: cDNAটা পরিশোধিত করতে হবে না?

নন্দন: করলেও হয়, তবে এখন যে টেকনিক বেরিয়েছে তাতে না করলেও চলবে।  তার মানে একটাই ছোট্ট টিউবে রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেস রিয়াক্সন আর PCR রিয়াক্সন দুটোই করা যাবে।  একই সঙ্গে মালমশলা মিশিয়ে দাও, 'রান্না চাপিয়ে দাও' , ঠিক পরপর হবে। এতে সময় বাঁচে।

চন্দন: দারুন তো।  আচ্ছা, PCR করে লাভটা কি ?

নন্দন: ওইটাই তো আসল রে ! ওটা না করলে জানাই যাবে না ভাইরাল RNA কোষগুলোর মধ্যে ছিল কি ছিল না।

চন্দন: RNA থেকে তো সব cDNA হয়ে গেলো ? তাহলে?

নন্দন: তাই তো।দেখ, সোজা হিসেবে। প্রথমে কোষ থেকে RNA বেরিয়েছিল। ঠিক?

চন্দন:  ঠিক।

নন্দন: সেই কোষ যদি কোনো সুস্থ লোকের হয়, তাহলে তাতে শুধু কোষের নিজের RNA থাকবে।  আর যদি করোনা আক্রান্তের হয় তাহলে তাতে কোষের নিজের RNA থাকবে আবার তার সঙ্গে ভাইরাল RNAও থাকবে। ঠিক আছে?

চন্দন: বোঝা গেল।

নন্দন: এবার মনে করে দেখ, আমরা যখন কোষ ফাটিয়ে RNA বানালাম কোনো তফাৎ করি নি।  যা RNA বেরিয়েছে, সব একসঙ্গে নিয়ে নিয়েছি।  যাকে বলে Total RNA . আর সেইটা দিয়েই  রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেস রিয়াক্সন করেছি।  তার মানে সুস্থ কোষ থেকে যে cDNA তৈরী হয়েছে সেটা শুধু মানব কোষের নিজস্ব RNAর কপি, আর যে কোষে ভাইরাস ছিল , সেই কোষ থেকে তৈরী cDNA হল কোষের  নিজস্ব RNA প্লাস ভাইরাল RNAর কপি।  বোঝা গেল ?

চন্দন: তারপর  ....?

নন্দন: এই cDNA দিয়ে real time PCR করা হবে।  মূল ব্যাপারটা হল PCR. খুব প্রচলিত টেকনিক, সারা পৃথিবীতে use হয়। হাই স্কুলের বইতেও থাকে এখন, bsc msc তো বটেই। আজকের দিনে দারুন অভিনব কিছু নয়, কিন্তু সত্যি যেন ম্যাজিক।

চন্দন: ধুর শালা  .....পয়েন্টে আয় না ? PCR কি করে সেটা বল।

নন্দন:  ব্যাপারটা কি জানিস, কোষের মধ্যে হাজার হাজার আলাদা ধরণের RNA ছিল. হয়তো সব মিলিয়ে ২ লক্ষ RNA মলিকিউল, কিন্তু সবগুলো এক নয়, অনেক ধরণের।  কোন একটা RNA হয়ত ১৫০ মলিকিউল ছিল, অন্য কোন RNA হয়তো ১০ হাজার মলিকিউল ছিল, আরেকটা RNA হয়ত ২৭০০ ছিল, যেটা যতটা দরকার।  আর ধরে ভাইরাল RNAও ৫০০ কপি ছিল।

চন্দন: তো....?

নন্দন: সেটাই তো।  এই ২ লাখের ভিড়ে ৫০০ ভাইরাল RNA খোঁজা যে চাপ বুঝতেই পারছিস। এ খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজা। ব্যাপারটা বেশ চাপের, তাই না?

চন্দন: হুম

নন্দন: কিন্তু ধরে যদি ওটা যদি একটা ছুঁচ না হয়ে ছুঁচের বড় বান্ডিল হত ? তাও আবার বান্ডিলটা লাল কাপড়ে মোড়া। তাহলে খুঁজে পেতে নিশ্চয়ই সুবিধে হত।  PCR ঠিক সেটাই করে।  যে ভাইরাল RNA থেকে তৈরী cDNA মাত্র ৫০০ কপি ছিল শুধু সেটারই কয়েক কোটি কপি বানিয়ে দিতে পারে।  বাড়িয়ে বলছি না।  কয়েক কোটি !!!

চন্দন: বলিস কি? ....তাহলে তো চেনা যাবেই !

নন্দন: এটাই তো।  PCR এমনই একটা শক্তিশালী টেকনোলজি যেটা শুধুমাত্র একটা DNA মলিকিউল পেলেও তার থেকে কয়েক কোটি হুবহু কপি বানিয়ে দিতে পারে। বুঝতেই পারছিস, এবার যে কোন কোষ থেকে যে RNA পাওয়া গেল তাতে ভাইরাল RNA ছিল কি না সেটা বোঝা কেমন সোজা হয়ে যেতে পারে। কি?

চন্দন: এতো ফাটাফাটি জিনিস গুরু  .....আচ্ছা, করতে কতক্ষন লাগে?

নন্দন: কয়েক ঘন্টা।  খুব বেশি হলে।  আর চাইলে এক সঙ্গে অনেকগুলো রিয়াক্সন করা যায়।

চন্দন: আচ্ছা, এই কপি হয় কি করে সেটা তো বললি  না ? খুব জটিল না কি?

নন্দন: না না, বেশ সোজা, এবং সেটাই এর beauty. তোর এখনো মনে আছে কি না জানিনা তবে ক্লাস ১২র বইতে যে DNA রেপ্লিকেশন (প্রতিলিপিকরণ) চ্যাপ্টার-টা এটা অনেকটা সেটাই।  একটাই তফাৎ -  জীবনবিজ্ঞানের বইতে যেটা পড়া হয় সেটা ঘটে জ্যান্ত কোষের মধ্যে, আর PCR হয় ছোট্ট টিউবের মধ্যে ল্যাবের যন্ত্রে।  আদতে ব্যাপারটা একই।

চন্দন: আচ্ছা  .....

নন্দন: তুই জানিস, DNA মলিকিউল হল একটা পলিমার।  হাজার হাজার এমনকি লক্ষ লক্ষ নিউক্লিওটাইড মনোমার পর পর জুড়ে তৈরী হয় এই লম্বা সুতোর মতো DNA strand বা তন্ত্র। আর দুটো DNA strand একে অপরকে পেঁচিয়ে করে ফেলে সেই বিখ্যাত Double Helix অর্থাৎ , দ্বিতন্ত্রী হেলিক্স। যেন একটা পেঁচালো সিঁড়ির মত। Strandদুটোর বাইরের দিকে ডিঅক্সিরাইবোস শর্করা আর ফসফেট অনু, আর ভেতর দিকে 'বেস' . চার ধরণের বেস পাওয়া যায় - A,  T , G আর C . বিশেষত্ব হচ্ছে, এক strandর A ঠিক খাপে খাপ লেগে যায় অন্য strandর T র সঙ্গে, আর এক strandএ যদি এক জায়গায় G থাকে উল্টো দিকের strandএ ওই পজিশনে C থাকবেই, আর দুটোই খাপে খাপ লেগে যাবে।

চন্দন: হ্যাঁ মনে পড়ছে  এবার  ....

নন্দন: মানে, এরকম করে চোখের সামনে ভাসিয়ে নে - DNA হল একটা প্যাঁচালো সিঁড়ি, যার দুটো হ্যান্ডেল শর্করা আর ফসফেট দিয়ে তৈরী, আর বেসগুলো জুড়ে গিয়ে হয় সিঁড়ির ধাপগুলো।
(ছবি: কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে DNA double helixর মডেল )

চন্দন: আচ্ছা, ভেরি গুড।  আর মনে পড়েছে - বেসগুলোকে ধরে আছে হাইড্রোজেন বন্ড।

নন্দন: পারফেক্ট।  ১০০য় ৯০ দিলাম।

চন্দন: ৯০ কেন? ভুল কি হল?

নন্দন: কিছু না, এমনি কাটলাম  ....

চন্দন : যাহ শালা  ....আচ্ছা, আপনা টাইম আয়েগা  ....বল , তারপর বল...

নন্দন: এখানে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে।  এমনি PCRএ double helix DNA দিয়ে কাজ শুরু হয়। কিন্তু, এখানে টেকনিকের শুরুটা একটু আলাদা। মনে করে দেখ, আমাদের এখানে কোনো দ্বিতন্ত্রী DNA এখনো নেই।  আছে, এমন একটা দ্বিতন্ত্রী মলিকিউল যা একটা strand হল RNA আর অন্য strandটা হল cDNA. এইটা দিয়েই আমরা আমাদের PCR শুরু করবো।  তবে , চিন্তা নেই - এক্ষত্রে এই RNA-cDNA হাইব্রিড আর  double helix DNA গুণাবলী'র মধ্যে কোনো তফাৎ নেই।  এখত্রেও RNA আর cDNAকে ধরে আছে হাইড্রোজেন বন্ড।  ঠিক কাজ হবে। বুঝেছিস?

চন্দন: got it . তারপর?

নন্দন: খুব সোজা।  ওই যে cDNA হল ওটার অনেক অনেক কপি তৈরী হবে PCRএ. টিউবে আগে থেকেই DNA পলিমারেস নামের উৎসেচক, ছোট ছোট ৪টে মনোমার dATP, dGTP, dCTP আর  dTTP দেওয়া আছে।  আর আছে দুটো ছোট ছোট এক তন্ত্রী (single strand ) DNA যার নাম প্রাইমার। কে কি কাজে লাগবে বলছি।  তার আগে বলে নি, মনে রাখবি, যে  PCR মেশিন টা বিভিন্ন টেম্পেরেচারে নিয়ে যাওয়া যায়।  এই ধর ৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখলাম ২ মিনিট, তারপরেই সোজা ৪০ ডিগ্রিতে নামিয়ে দিলাম ১ মিনিট আবার ৭০ ডিগ্রি নিয়ে গিয়ে রাখলাম ৩ মিনিট।  এরকম করা যায়।  যন্ত্রের মধ্যে একটা চিপ আছে, যাতে তুই যা প্রোগ্রাম করে দিবি সেই অনুযায়ী তুই যা তাপমাত্রা আর যা সময় maintain হবে।  যা তোর ইচ্ছে।

চন্দন: বাহ্ বাহ্ বাহ্  ...তারপর?

নন্দন: এবার প্রথমেই টেম্পেরেচার ৯৫ ডিগ্রিতে নিয়ে চলে যায়। প্রায় ফুটন্ত জলের কাছাকাছি।  এতে যেটা হয় সেটা হল ওই RNA-cDNA হাইব্রিডকে যে হাইড্রোজেন বন্ড ধরে রেখেছিলো সেগুলো খুলে যায়। আর strandদুটো আলাদা হয়ে যায়।


 চন্দন: অত গরমে নষ্ট হয়ে যায় না ?

নন্দন: নঃ।  ৮০০-৯০০ ডিগ্রি না গেলে DNAর কিছু হয় না।  খুব stable মলিকিউল।  এখানে খালি RNA আরcDNA আলাদা হয়ে যায়।  আবার ঠান্ডা করলেই প্যান্ট বা ব্যাগের জিপারের মত বেসগুলো পরপর জুড়ে যাবে।  ....তবে যাক সে কথা  ....এখানে কি হয়, এইবার টেম্পেরেচার নামিয়ে আনা হয় ৫৫-৫৮ ডিগ্রিতে। এইখানে একটা মজার ব্যাপার হয়।..... মনে আছে, দুটো প্রাইমার দেওয়া আছে বলেছিলাম? এবার তাদের কাজ।  দেখ, ভাইরাসের RNAতে পরপর, একের পর এক ভাইরাল জিন গুলো বসানো আছে।  তার মানে দাঁড়ালো, সেই ভাইরাল RNA থেকে যে কপি হয়েছে তাতেও ওই ভাইরাল জিনগুলোর প্রতিলিপি একই ভাবে বসানো আছে।  ঠিক আছে?

চন্দন: হ্যাঁ ,মানে বইয়ের পাতাতে যা লেখা আছে, সেই পাতা থেকে করা জেরক্স পেজেও একই লেখা আছে।

নন্দন: একদম, দারুন বলেছিস। এইবার এই যে দুটো প্রাইমার এগুলোও তো DNA, এদেরও A T G C সাজানো আছে।  তবে এমন করে সাজানো আছে যে ঠিক একটা বিশেষ ভাইরাল জিনের যে DNA তার মুখে আর লেজে লেগে যাবে।  ওই হাইড্রোজেন বন্ড দিয়ে।  Aর সঙ্গে T, আর Gর সঙ্গে C . এটা কিন্তু প্রাইমার দুটো এমনিতে করতে পারতো না, কারণ RNA-cDNAর দুটো strand একে ওপরের সঙ্গে লেপ্টে ছিল, কিন্তু এখন ৯৫ ডিগ্রিতে গরম করতে খুলে গেছে। মানে হাইড্রোজেন বন্ডগুলো ভেঙে গেছে।

চন্দন: তাতে কি হল ?

নন্দন: প্রাইমার এরকম করে বসে গেল। এইবার শুরু হবে উৎসেচক (এনজাইম) Taq DNA পলিমারেস'র খেলা।  তার কাজ হল যেখানে গিয়ে প্রাইমার আটকেছে তার ঠিক পর থেকে পরপর ওই চারটে মনোমার dATP, dGTP, dCTP আর  dTTP জুড়তে থাকবে।  তবে যেমন ইচ্ছে তেমন নয়।  আগে থেকে যে cDNA strandটা ছিল সেটা এখানে ছাঁচ বা template. যদি ওতে A থাকে তাহলে উল্টোদিকে Taq DNA পলিমারেস T বসাবে; যদি তার পর templateএ  C থাকে তাহলে উল্টোদিকে পলিমারেস G বসাবে, আর T আর Gকে জুড়ে দেবে।  এইভাবে মনোমার জুড়তে জুড়তে Taq পলিমারেস এগোতে থাকবে আর একটা নতুন DNA স্ট্র্যান্ড তৈরী করে ফেলবে।  শুরু হয়েছিল একটা cDNA strand আর রেএকশনের এই সাইকেল শেষ হলে একটা নতুন strand পাওয়া হবে।  তার মানে একটা দিতন্ত্রী DNA মলিকিউল। এক থেকে দুই। ডবল!
চন্দন: বাহ্।  তারপর ? শেষ?

নন্দন: না রে ভাই, তবে এবার ঝটপট এগোবে সাইকেলগুলো। PCR মেশিনে এমন প্রোগ্রাম কোড করে দেওয়া থাকে যে আবার ৯৫ ডিগ্রিতে চলে যাবে। তখন আবার এই দ্বিতন্ত্রী  DNA মলিকিউলের strand আলাদা হবে, আবার টেম্পেরেচার কমিয়ে আনবে, আবার প্রাইমার গিয়ে আটকাবে, আবার Taq polymerase  এসে আগের মতোই নতুন strand তৈরী করবে। তাহলে এই সাইকেলের শেষে টোটাল হল চারটে  দিতন্ত্রী DNA মলিকিউল।  এক থেকে দুই থেকে এবার চার।



চন্দন: এটা চলতেই থাকবে?

নন্দন : একদম। এক থেকে দুই, দুই থেকে চার, চার থেকে আট, এত থেকে ষোলো, ষোলো থেকে বত্রিশ  .....যতক্ষণে ৩০-৪০ সাইকেল হয়েছে ততক্ষনে একটা ভাইরাল cDNA  মলিকিউল থেকে কোটি কোটি daughter DNA তৈরী হয়ে গেছে। বিশাআআললললল একটা amplification. এ যেন লটারির বাবা, ক্যাসিনোর জ্যাকপট।


চন্দন: আচ্ছা, প্রাইমারগুলো ভাইরাসের কোন জিনের সামনে পেছনে গিয়ে আটকাবে সেটা কে ঠিক করবে?

নন্দন: বিজ্ঞানীরা ঠিক করবেন, in fact, ঠিক করেছেন। ....যেটা  খেয়াল রাখতে হয়েছে যে এমন একটি ভাইরাল জিন বেছে নিতে হবে যেটা শুধুমাত্র এই নতুন কোরোনাভাইরাসেই আছে। মানুষের কোষে তো নয়ই, অন্য ভাইরাসেদের ও  থাকলে চলবে না।

চন্দন: তাতে ঠিক কি লাভ হবে?

নন্দন: তবেই ১০০% নিশ্চিত হওয়া যাবে যে অন্য কোনো সংক্রমণ হয়নি  ....কত রকমই ভাইরাস তো ঘুরে বেড়াচ্ছে।  .....সর্দি কাশি মানেই কি নতুন কোরোনাভাইরাস নাকি ? নতুন জীবাণু এসেছে বলে কি পুরোনোগুলো vacationএ গেছে? ........ সেই জন্যেই এমন একটা জিন নিতে হবে যেটা শুধু নতুনের আছে  ...almost যেন এর নিজের signature, অন্য কারুর নেই  ....

চন্দন: দুর্দান্ত, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না এমন হতে পারে  ....

নন্দন: এটাই  .....আর সবচেয়ে বড় জিনিস কি, শুধু ভাইরাল cDNAর একটা ছোট্ট অংশ, একটা মাত্র জীন থেকে,  এতো কোটি কোটি কপি হয়েছে।  আর যা যা cDNA ছিল - মনে আছে, সঙ্গে কোষের নিজের RNA থেকে তৈরী cDNA অনেক ছিল - সেগুলোকে কিন্তু  Taq polymerase আর প্রাইমার দুজন ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেনি।

চন্দন: মানে, একটা মোটা বই'র শুধু একটা পাতা আমি ১০০০টা জেরক্স করলাম।  অসাধারণ।

নন্দন: পারফেক্ট।  আর কোন জীন ? ভাইরাসের জীন।  যে জীন এমনিতে আমাদের কোষে নেই।  সুতরাং যাঁর সংক্রমণ হয়নি তার কোষ থেকে RNA বেরোবে, রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেস তার থেকে cDNAও বানাবে, কিন্তু লাস্টে তার থেকে PCR হবে না।  শুধুমাত্র যাঁর ইনফেকশন হয়েছে, তার কোষে ভাইরাস আছে বলে PCRও কাজ করবে আর ওই নির্দিষ্ট DNA দেখা যাবে।

চন্দন: দুর্দান্ত। আচ্ছা, DNAটা যে হল সেটা দেখা যাবে কি করে?

নন্দন: ভাল প্রশ্ন করেছিস।  DNA দেখার অনেক কায়দা আছে, তবে এখানে যে কায়দা-টা লাগে সেটা হল একটা ফ্লুরোসেন্ট টেকনিক।

চন্দন: ফ্লুরোসেন্ট? মানে আমাদের ফ্লুরোসেন্ট লাইট?

নন্দন: মিল আছে , ঠিকই।  তোকে আমি বেশি ডিটেল বলব না (আর বললে ঘেঁটে যাবে ), তবে হয় কি - ওই যে টিউবে রিয়াক্সন হচ্ছিল, ওর মধ্যে একটা বিশেষ মলিকিউল দেওয়া আছে।তার নাম হচ্ছে Taqman.  সেটা এমনিতে চুপটি মেরে থাকে, কিন্তু যত PCR ঠিকঠাক হতে থাকে আর DNAর পরিমান বাড়তে থাকে ওটা সক্রিয় হয়ে ওঠে আর ফ্লুরোসেন্ট আলোর সিগন্যাল দিতে থাকে।  তখন PCR যন্ত্রের সঙ্গে যে কম্পিউটার লাগানো আছে তার স্ক্রিনেই দেখতে পাওয়া যায় ফ্লুরোসেন্ট সিগন্যাল কেমন বাড়ছে না বাড়ছে না।  যদি বাড়ে বুঝবি ভাইরাস ছিল, না বাড়লে ছিল না।  সোজা হিসেবে।  রিয়াক্সন চলাকালীন দেখা যায় বলে এর নাম রিয়েল টাইম PCR. ঠিকঠাক করলে রেসাল্ট আসবেই।

চন্দন: আচ্ছা, ইনফেকশন হবার পরের দিন টেস্ট করলেই ধরা যাবে?

নন্দন: না  ....একি ম্যাজিক নাকি? ভাইরাস ঢুকবে, একটু বংশ বৃদ্ধি করবে, আরো কয়েকটা কোষে ছড়াবে।  তবে তো কিছুটা RNA  পাওয়া যাবে।  সেই জন্যে ইনফেকশন হবার ৪-৫ বা ৬ দিনের মাথায় টেস্ট করলে ভালো।  যথেষ্ট RNA পাওয়া যাবে।তার আগে করলেও পাওয়া যাবে হয়তো  ....কিন্তু ধর পেল না, তাই একটু wait করা ভালো।  নজরে রাখ, কোয়ারেন্টাইন কর, সময় হলে টেস্ট কর।  .... 

চন্দন: হ্যাঁ, তাও বটে  ....কিন্তু, ধর সব করলো কিন্তু কোনো কারণে ভুল রেসাল্ট এল ? তাহলে?

নন্দন: দেখ, পুরোটাই বিজ্ঞানের যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই ঠিক করে করলে ভুল হবার কথা না, তবে এটাও ঠিক কোনো না কোনো গন্ডগোল হতেই পারে।  বিরাট আর সচিন কি জীবনে দশের কমে আউট হয়নি, হয়েছে।  ভুল হতেই পারে - যন্ত্রের, কেমিক্যালের, এনজাইমের , যিনি পরীক্ষা করছেন তাঁর। ..... তবে কিছু কিছু কায়দা আছে যার থেকে বোঝা যায় রিয়াক্সন হল কি হল না।

চন্দন: কিরকম?

নন্দন: নিশ্চয়ই তোর মনে আছে কোষের নিজের RNA থেকে তৈরী cDNA অনেক ছিল।

চন্দন: ছিল  ...তো ?

নন্দন: বিজ্ঞানীদের বুদ্ধি দেখ। ওই একই টিউবে আরো দুটো প্রাইমার দিয়ে দেন।  সেগুলো কিন্তু ভাইরাল cDNAকে ছোঁয় না, তারা গিয়ে মানুষের কোষে সবসময় পাওয়া যায় এমন একটি RNA থেকে তৈরী cDNA তে গিয়ে আটকে যায়।  আর যখন রিয়েল টাইম PCR শুরু হয় , আগের রিএকশনের পাশাপাশি এই PCRও চলতে থাকে।

চন্দন: তার মানে হল , ভাইরাল RNA থাকুক বা না থাকুক এই দ্বিতীয় PCR টা হবেই।

নন্দন: Exactly ,আর একটাই প্রমান যে রিয়াক্সন কাজ করেছে।  ভাইরাল RNA থাকুক না থাকুক , কোষের নিজের RNA তো ছিলই, তাই প্রথম PCR হোক না হোক , সেকেন্ড টা হবেই।  যদি না হয় , তাহলে বুঝবি কোন গন্ডগোল। তখন আবার সব করতে হবে।

চন্দন: আচ্ছা, দুটো PCR যে একই টিউবে চলবে, ঘেঁটে যাবে না ?

নন্দন: পলিমারেস আর প্রাইমার কি মানুষ যে ঘেঁটে ফেলবে? নাঃ -চিন্তা নেই।  এরা খুব specific . যে কাজ করার কথা শুধু সেটাই করে,  অন্যদিকে ফিরেও তাকায় না।

চন্দন: তার মানে যদি কারুর ইনফেকশন না হয়ে থাকে, তাহলে একটা PCR কাজ করবে, আর যার ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে দুটো PCR কাজ করবে। তাই তো?

নন্দন: হ্যাঁ , আর শুধু ইনফেকশন ধরার জন্যে নয়, যখন ট্রিটমেন্ট হচ্ছে তখনও চেক করা হয়।  ধরে, যদি ১০ দিন পরে আবার রিয়েল টাইম RT PCR করে দেখলো আর ভাইরাল RNA নেই, তাহলে বুঝবে যে সংক্রমণ সেরে গেছে, রুগী সুস্থ হয়ে উঠছেন।

চন্দন: উফফফফ।......কি দুর্দান্ত জিনিস।

নন্দন: সত্যি। বিস্ময়কর। যাকে সাধারণ মাইক্রোস্কোপে ও দেখা যায় না, তার অস্তিত্ব কি সুন্দর ভাবে দেখিয়ে দেয়।

চন্দন: দেখতে পেলে দারুন হত। 

নন্দন: সে আর কি করে দেখবি? তবে Youtube এ ভিডিও দেখতে পারিস।  যেমন এটা https://www.youtube.com/watch?v=5f_wieig4iQ

চন্দন: এটাই কি একমাত্র টেস্ট ? .....কি একটা দেখলাম সেদিন খবরে - rapid test ...? সেটা আর এটা এক?

নন্দন: না না।  ওটা অন্য, ওটা পরে আরেকদিন বলব।

চন্দন: থাঙ্কস বস।  চ' ....চা খেয়ে আসি।

নন্দন : কোথায়? বন্ধ তো  ....বাড়িতেই বসা।  ওই দেখ, একটু ঠান্ডা হওয়া দিচ্ছে, বৃষ্টি হবে।


(যন্ত্রের ছবি গুগল থেকে নেওয়া। গ্রাফের ছবি উইকিপেডিয়া থেকে। জাদুঘরের ছবিটা আমার তোলা, বছর ৩-৪ আগে। বাকিগুলোর আমার আঁকা। বললাম না, খেয়ে দিয়ে কাজ নেই) 



No comments:

Post a Comment

 স্কুল খুলুক, সঙ্গে হাওয়া বাতাস খেলুক ক্লাসঘরে ('এই সময়' সংবাদপত্রে প্রবন্ধ -  ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২১)      সোজাসাপ্টা অপ্রিয়   সত...