কোরোনাভাইরাস তুমি যে কার? কোন গোপন ল্যাব,না কি প্রকৃতির সম্ভার ?
(করোনা বিজ্ঞানের খুচরো খবর -৯)
নন্দন: কী রে ? বসে বসে গজগজ করছিস কেন ?
চন্দন: আর পারছি না ভাই। এ কবে উঠবে বল তো? আর শালা চীনের ওপরে উত্তাল রাগ হচ্ছে। কিরকম করে ভাইরাস ছেড়ে সবাইকে
পথে বসিয়ে দিল দ্যাখ !
নন্দন: ধুস, যত ট্রাম্প-মার্কা বাজে কথা।
চন্দন: মেকি চীন-দরদ দেখাতে যাস না আমার কাছে, নন্দন। ওরা বহুত ....
নন্দন: দ্যাখ! আমি চীনের খাই না পরি যে ওদের দরদ দেখাতে যাব? হ্যাঁ, আমার ফোন আর কম্পিউটার মূলত চীনা মাল দিয়ে তৈরী - সে তো জগতে সবার ভাই। কিন্তু, তাই বলে ওদের ফালতু ডিফেন্ড করতে যাব কেন ?
চন্দন: সেইরকমই শোনাল। ...
নন্দন: দ্যাখ, ট্রাম্পের সঙ্গে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের কিরকম মধুর সম্পর্ক সবাই জানে। চীনও ধোয়া তুলসীপাতা নয়, এবং কেউই নয়। কিন্তু, সেটা তো রাজনীতির প্রশ্ন। তা দিয়ে তো বিজ্ঞান চলে না। সুতরাং মূল প্রশ্ন হচ্ছে - গত চার মাসে নানা দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এই নতুন ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে নামকরা জার্নালে কি কি প্রকাশ করেছেন ? তার থেকে আমরা কি জানতে পারি ?
চন্দন -তুই বলছিস চীন ল্যাবে ভাইরাস বানায়নি।
নন্দন: দ্যাখ, আমি কি বললাম না বললাম সেটা কথা নয়। কথা হচ্ছে এভিডেন্স কি আছে? পক্ষে না বিপক্ষে? ফেলুদা পড়িসনি? 'রয়েল বেঙ্গল রহস্য' - 'আপনি আগে ক্রিমিনাল ঠিক করে তার ঘাড়ে ক্রাইম ফেলার চেষ্টা করেন, আর আমি ক্রাইমের ধাঁচ বুঝে সেই অনুযায়ী অপরাধী খোঁজার চেষ্টা করি।' সেই একই জিনিস।
চন্দন: সে তো গোয়েন্দা গল্প।
নন্দন: বিজ্ঞানীরা তো এক ধরণের গোয়েন্দা। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, হোমস, সোনি টিভির ক্রাইম পেট্রল'র পুলিশ অফিসার মতোই তাদের কাজ - বিজ্ঞানের জানা-অজানা নিয়ম দিয়ে অনুসন্ধান করা, এক্সপেরিমেন্ট করে তথ্য বের করা, সেগুলো এনালাইসিস করা, তারপর জনসমক্ষে আনা।
চন্দন : আচ্ছা, তুইই বল , তোর তো মাইক্রোবায়োলজি ডিগ্রী আছে। বিজ্ঞানীরা কি জানতে পেলেন এই ভাইরাস সম্পর্কে?
নন্দন: আচ্ছা, বলছি। বিজ্ঞানের জার্নালে যা সব নতুন রিসার্চ পেপার বেরিয়েছে তা থেকে যা বুঝেছি তা সোজা করে বলার চেষ্টা করছি। তবে তার আগে একটা কথা বল - আজ অবধি এমন কোন মহামারী বা ইনফেকশনের কথা শুনেছেন যেটা প্রাকৃতিক নয়? মনে করে দেখ তো ।
চন্দন: যাহ শালা ...না ঠিক মনে পড়ছে না এখন। ...দেখবো। ...
নন্দন: তুই যতই খোঁজ , আমি বলে দিচ্ছি উত্তরটা ‘না’। সব রোগের জীবাণু ন্যাচারাল। বসন্ত, কলেরা, পলিও, টাইফয়েড, হাম, হেপাটাইটিস, চিকেন পক্স, ফুড পয়েসন , জয় বাংলা, টেটানাস, ম্যালেরিয়া , টিবি, ডেঙ্গু কোনটা ব্যাকটেরিয়া কোনটা ভাইরাস কোনটা পরজীবী-জনিত । কিন্তু প্রতিটা জীবাণূ প্রকৃতির সন্তান, ডারউইনের আবিষ্কার মেনে জৈবিক বিবর্তণের ফসল । আমাদের মতোই এরা সবাই এই নীল গ্রহের বাসিন্দা।
চন্দন: sure ?
নন্দন: একদম। আলফাল গুগল সাইট না খুলে তুই সাবজেক্টের বই খুলে দেখ না। আজ অবধি সব ইনফেকশন বা মহামারী ন্যাচারাল জীবাণু দিয়েই হয়েছে। হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে মানুষ এদের কয়েকজনকে ব্যবহার করেছে যুদ্ধে। যেমন, সেই প্রাচীন কাল থেকে শত্রুর জলাশয়ে কলেরা রুগীর বডি ফেলে দেওয়া হয়েছে; আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গরা রেড-ইণ্ডীয়াণদের বসন্তরুগীদের কম্বল বিক্রি করেছিল আর তারপর সেই সব গ্রাম সাফ হয়ে যেতে সেখানে নিজেদের জমিদারি বাড়িয়ে নিয়েছিল; ২০০১র পরে নাকি কয়েক বার উগ্রপন্থীরা অ্যান্থ্রাক্স জীবাণু চিঠিতে ভোরে দিয়ে কয়েকজনকে খুন করার চেষ্টা করেছে । কিন্তু, সে সবই হল প্রাকৃতিক জীবাণুকে ব্যবহার করে । ল্যাবে-তৈরি জীবাণু ব্যাবহার হয়েছে এমন কোণ প্রমাণ নেই।
চন্দন চুপ দেখে নন্দন বলে চলে - এতে অবশ্য অবাক হবার কিছু নেই –প্রাকৃতিক বিবর্তনের ক্ষমতা অসীম। ভুললে চলবে না চারপাশে যত গাছ, আগাছা, মাছ, তিমি মাছ, পোকা, গুবরে পোকা, মশা, মাছি, সাপ, বেজী, বিছে, কাঁকড়াবিছে, ব্যাঙের ছাতা, ব্যাঙ, কাক, ঘুঘু, চড়াই, হাড়গিলে, বাঘ, বাঘের মাসী, হারিয়ে যাওয়া ডাইনোসর বা ডোডো পাখি, বাঁদর, মুখপোড়া হনুমান, আমাদের অবলুপ্ত-হওয়া জ্ঞাতি নিয়াণডারথাল বা হোমো ইরেক্টাস এবং আমরা নিজেরা সবাই ওই বিবর্তনের ফল । সামাজিক ভাবে এই সত্য মানতে আজও অনেকের একটু অসুবিধে হতে পারে, কিন্তু, তাতে কী করা যাবে? তুই,আমি, ট্রাম্প মানি বা মানি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরেছে, ঘুরছে এবং ঘুরবে ।
চন্দন: কিন্তু ....
নন্দন: আরেকটা ব্যাপার আছে।এটাও বৈজ্ঞানিক সত্য। আজ অবধি যত রোগের জিবানু জানা গেছে তাদের একটা বড় অংশ নানারকম জন্ত্র-জানোয়ার থেকেই মানুষের শরীরে প্রথমে প্রবেশ করেছিল, তারপর বংশানুক্রমে এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে ওই আগের জন্তুর আর প্রয়োজনই নেই - স্বচ্ছন্দে এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে লাফিয়ে যেতে পারে। এ যেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে বসবাস শুরু করা আর তারপর আগের দেশে কোনদিন ফিরে না আসা, কয়েক জেনেরেশান পরে আর অরিজিনাল দেশের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ থাকবেই না
চন্দন: example দিতে পারবি?
নন্দন: অবশ্যই। দুটো বিখ্যাত জিবানুর কথা বললেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে - এক, যক্ষ্মার জিবানু Mycobacterium tuberculosis।বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত যে গরু/মোষ জাতীয় কোন প্রাণী থেকে এই ব্যাকটেরিয়া'র পূর্বপুরুষ আদিম মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তবে Mycobacterium কবে আদিম মানুষের শরীরে প্রথম আস্তানা গেড়েছিল সে নিয়ে কিছুটা মতবিরোধ আছে - কেউ বলে প্রথম যখন গবাধি পশু পালন করা শুরু হল তখন; কেউ বলেন আরও আগে, যখন আমাদের পূর্বপুরুষরা আফ্রিকার প্রান্তরে দল বেঁধে মোষ-বাইসন শিকার করা শুরু করেন ।
চন্দন: ও আচ্ছা ....জানতাম না ....
নন্দন: অবশ্য ওত দূরের ইতিহাসে গিয়েও কাজ নেই । কারণ দ্বিতীয় জীবাণু হল এইডস ভাইরাস - কালান্তক HIV. এর ইতিহাস আরও রিসেন্ট, আরও সুস্পষ্ট এবং তাই প্রায় নিঃসন্দেহ হয়েই বলা যায় যে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে Simian Immunodeficiency Virus (SIV)- যেটা শিম্পাঞ্জিদের অসুখ করায়- সেটা কোন ভাবে শিম্পাঞ্জিদের নিকট প্রজাতি মানুষের দেহে প্রবেশ করে। আফ্রিকা থেকে সেই রোগ ছড়িয়ে পরে, আর তার পরে মাত্র ৪০ বছরে কি মহামারীর আকার নিয়েছে তা সাধারণ মানুষেরও অজানা নয় ।
চন্দন: শিম্পাঞ্জি থেকে এইডস ভাইরাস এসেছে????
নন্দন: সেটাই তো বলছি। জন্তু জানোয়ার থেকে ভাইরাস আসেই। এসব নতুন কিছু নয়। তাহলে আমাদের টপিকে ফিরে আসি - কি দাঁড়াচ্ছে ? একদিকে আছে প্রকৃতির জানা-অজানা বিশাল সম্ভার; উল্টোদিকে ঢুঢু গড়ের মাঠ। এই অবস্থায় বিজ্ঞানীরাকোরোনাভাইরাসের উৎপত্তি জানতে কোথায় অনুসন্ধান শুরু করবেন ? নিশ্চয়ই প্রকৃতিই তাঁদের starting point হবে ।
চন্দন: তা বটে। তারপর ...
নন্দন : শুরু থেকে শুরু করা যাক । জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে চীনের বিজ্ঞানীরা এই নতুন ভাইরাসের জিনোমের সিকএন্সিং (genome sequencing) করেন।সিকএন্সিং হল একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া যা দিয়ে সাংকেতিক ভাষার পাঠোদ্ধার করা হয় , কোড ব্রেক করা হয় ।
চন্দন: হ্যাঁ।sequencing হল জিনোমে সাজানো অক্ষরগুলোকে পরপর পড়ে ফেলা।
নন্দন: very good . এই প্রসঙ্গে আগেরবার কি বলেছিলাম মনে আছে ? - গোলাকার ভাইরাসের ভেতরে আছে একটি সুতোর মতো RNA মলিকিউল। এই RNAই হল কোরোনাভাইরাসের জিনোম, অর্থাৎ মূল ডেটা স্টোরেজ আর কন্ট্রোলার। সোজা কথায় - হেডকোয়ার্টার। এর মধ্যেই 'প্রকৃতির সাংকেতিক ভাষায়' (যার বৈজ্ঞানিক নাম genetic code) কোরোনাভাইরাসের ২৯টি প্রোটিন তৈরীর নির্দেশাবলী লেখা আছে, অনেকটা যেমন আমাদের ছোটবেলার ক্যাসেটের সুতোয় পরপর 'লেখা থাকতো' অনেকগুলি গান।একই ভাবে আমাদের কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ২৩ জোড়া ক্রোমোসোমে আমাদের ২৫০০০র বেশি প্রোটিন তৈরির নিয়মাবলী লেখা আছে। মলিকিউলার বায়লজির নিয়ম মেনে এক্সপেরিমেন্ট করে এই জেনেটিক কোড পড়ে ফেলাকে বলে সিকএন্সিং।
চন্দন: এটা করে কি লাভ হয়?
নন্দন: লাভ অনেক। এটাই তো starting point . ভাইরাসের গোপন একাউন্টে কি আছে জেনে ফেলতে যায়। এক, এই ভাইরাসের কি কি প্রোটিন তৈরি করার ক্ষমতা আছে তা নিয়ে একটা পরিষ্কার আন্দাজ পাওয়া যায়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ কোষের মধ্যে এই ভাইরাল প্রোটিনরাই ভাইরাসের যাবতীয় কাজ কারবার করে। সুতরাং ভাইরাস'র বংশবৃদ্ধি আটকাতে হলে এক বা একাধিক ভাইরাল প্রোটিনকে পঙ্গু করতে হবে। শত্রু'র যুদ্ধজাহাজ বা ট্যাঙ্ক-কে যেমন ধ্বংস করতে হলে সেগুলোকে চিনতে পারা চাই, ভাইরাসকে হারাতে হলে তার প্রোটিনদের চেনাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।
চন্দন: আর ....?
নন্দন : বলছি, একটু ধৈর্য ধর ভাই। দুই, ঠিক যেমন আমার নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে আমার জিনোম বেশি মিলবে, আর তোর আত্মীয়দের সঙ্গে তোর জিনোম বেশি মিলবে (যে জন্যে আজকাল ডীএণএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং করা হয়), তেমনই কোন কোন পুরোনো ভাইরাস এই নতুন করনাভাইরাসের জ্যাঠা-কাকা-দাদু-মামা-বোন-পিসি- ঠাকুমা সেটা জিনোম সিকএন্সিং করলে বোঝা যায়।
চন্দন : কেমন করে?
নন্দন: দ্যাখ, সেটা একটা বড় কেমিক্যাল রিএকশন আছে। অত তোর জেনে কাজ নেই। তবে মোদ্দা কথা হচ্ছে পুরো জিনোমের অক্ষরগুলো পড়া হলে সেই তথ্য ডেটাবেসে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ওখানে store হয়ে থাকে। আজকের দিনে কম্পিউটার-ভিত্তিক জীবনবিজ্ঞান'র গবেষণা বড় সুবিধে হল ডেটাবেস থেকে চট করে হাজার হাজার জিনোম'র সিকোয়েন্স পাওয়া যায়। গত ২০-২৫ বছরে এত এত জীবজন্তুর জিনোম সিকোয়েন্স হয়েছে যে প্রায় ইয়ত্তা নেই। আর সেই সব জিনোম ডেটা রাখা থাকে বেশ কিছু নামকরা ডেটাবেসে, যেমন আমেরিকার NCBI (ন্যাশানাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলোজিকাল ইনফরমেশন)। যদি জানতে চাস একটি নতুন জিনোমের জ্ঞাতি গুষ্টি কোন কোন জিনোম আছে তাহলে ওইসব ডেটাবেসে বায়ইনফরমাতিক্স (bioinformatics) নিয়ম মেনে খুঁজতে হবে ।
চন্দন: কি খুঁজবে? একটু বল।
নন্দন: বেসিক ব্যাপারটা সোজা। একাধিক জিনোম পাশাপাশি ফেলে দেখতে হবে তাদের মধ্যে কোথায় মিল আর কোথায় অমিল।যেমন ধর, এই আমি পর পর তিনটে জিনোমের একটা ছোট্ট অংশ এখানে লিখে দিচ্ছি।
জিনোম ১: TGTACGTACGGTAGCTATCG....
জিনোম ২: TTTACGTAAGGTAGCTATAG....
জিনোম ৩:TTTACGTAAGCTAATTATAG....
মিলিয়ে দেখ, ১ আর ২র মধ্যে তিনটে অক্ষরের তফাৎ পাবি । ১ আর ৩র মধ্যে ৬টা অক্ষরের তফাৎ পাবি। তার মানে, ১ আর ২ হল নিকট আত্মীয় ; ১ আর ৩ ও আত্মীয় কিন্তু একটু বেশি দূরের। শাখা প্রশাখা।
চন্দন: বাহ্। তার মনে যদি মানুষের জিনোম নিয়ে align করি তাহলে দেখব সবচেয়ে বেশী মিল শিম্পাঞ্জি জিনোমের সঙ্গে, তারপর গরিলা, ওরাং উটান, ইত্যাদি।
নন্দন: একদম। এটা দারুন বলেছিস। দেখা গেছে শিম্পাঞ্জি জিনোমের সঙ্গে আমাদের জিনোমের ৯৬% র বেশি মিল । গোরিলাদের ক্ষেত্রে একটু কম। .... আর নতুন করোনা ভাইরাস কোন ভাইরাস পরিবার থেকে এলো সেটা বুঝতে মোটামুটি একই পন্থা নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
চন্দন: আচ্ছা, একটা কথা বল। এই যে জিনোম ১ আর জিনোম ২ তো একই বংশের দুটি শাখা। এদের পূর্বপুরুষ এককালে এক ছিল। তাহলে এই তফাৎগুলো হল কি করে?
নন্দন: হা হা হা। তুই ধাঁ করে সবচেয়ে বেসিক প্রশ্নটা করে ফেলেছিস। উত্তর একটাই - এটাই বিবর্তন। এটাই ডারউইনের থিওরির প্রমান। .....ঠিকই বলেছিস। এককালে একটাই পূর্বপুরুষ জিনোম ছিল; তার থেকে প্রথমে জিনোম ৩ আলাদা হয়ে গেল, তারপর জিনোম ১ আর ২।
চন্দন: কি করে হল?
নন্দন: সেই জিরাফদের যা হয়েছিল মোটামুটি একই ব্যাপার। ধরে, কয়েক লক্ষ বছর আগের একটা প্রাগৈতিহাসিক জিরাফ দম্পতি। আধুনিক জিরাফদের পূর্বপুরুষ হলেও এরা দেখতে অনেকটা জেব্রাদের মত। এদের গলার হাইট আধুনিক জিরাফের মত বেশি নয় - বাবা-জিরাফ আর মা-জিরাফের গলার হাইট ৪.১ ফিট আর ৩.১০ ফিট। এরপর তাদের ৫টা বাচ্ছা হল - এদের গলার হাইট যথাক্রমে ৩.১১, ৪.১, ৪.১, ৪.৩ আর ৪.৪ ফিট। এরা সবাই আফ্রিকার একই অঞ্চলে চরে বেড়ায়, কিন্তু যে বাচ্ছা'র গলা ৪.৪ ফিট সে শুধু ঘাস বা নিচু গাছের পাতা নয়, লম্বা লম্বা গাছের উঁচু ডালের পাতাও বেশি খেতে পারে। তাতে কি হল? এটা একটা fitness advantage, তার জন্মগত সুবিধে - এবং তাই সে বেশি পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে। বেশি খাবার পেলে শরীর ভালো থাকে, জোর হয়, রোগটোগ কম হয়, অন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে জেতা যায়, বেশি মেয়ে-জিরাফ পটানো যায়। আর তাই কয়েক বছর পরে দেখা গেল ওরই বেশি বাচ্ছা হল। বায়োলজিতে এটাই success . যেন অনেকগুলো varietyর মধ্যে প্রকৃতিই 'select করলো' কে বেশি সফল।
চন্দন: কি করে হল?
নন্দন: সেই জিরাফদের যা হয়েছিল মোটামুটি একই ব্যাপার। ধরে, কয়েক লক্ষ বছর আগের একটা প্রাগৈতিহাসিক জিরাফ দম্পতি। আধুনিক জিরাফদের পূর্বপুরুষ হলেও এরা দেখতে অনেকটা জেব্রাদের মত। এদের গলার হাইট আধুনিক জিরাফের মত বেশি নয় - বাবা-জিরাফ আর মা-জিরাফের গলার হাইট ৪.১ ফিট আর ৩.১০ ফিট। এরপর তাদের ৫টা বাচ্ছা হল - এদের গলার হাইট যথাক্রমে ৩.১১, ৪.১, ৪.১, ৪.৩ আর ৪.৪ ফিট। এরা সবাই আফ্রিকার একই অঞ্চলে চরে বেড়ায়, কিন্তু যে বাচ্ছা'র গলা ৪.৪ ফিট সে শুধু ঘাস বা নিচু গাছের পাতা নয়, লম্বা লম্বা গাছের উঁচু ডালের পাতাও বেশি খেতে পারে। তাতে কি হল? এটা একটা fitness advantage, তার জন্মগত সুবিধে - এবং তাই সে বেশি পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে। বেশি খাবার পেলে শরীর ভালো থাকে, জোর হয়, রোগটোগ কম হয়, অন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে জেতা যায়, বেশি মেয়ে-জিরাফ পটানো যায়। আর তাই কয়েক বছর পরে দেখা গেল ওরই বেশি বাচ্ছা হল। বায়োলজিতে এটাই success . যেন অনেকগুলো varietyর মধ্যে প্রকৃতিই 'select করলো' কে বেশি সফল।
চন্দন: আর মেন্ডেলের ল' মেনে বাচ্ছাগুলো ওর ওই লম্বা গলা পেল। একই পরিবারের লোকের মধ্যে যেমন মিল থাকে।
নন্দন: ঠিক। তবে শুধু মিল নয়, পরের জেনারেশনেও তফাৎ থাকতে লাগল। কারুর গলার হাইট এবার ৪.৩, কারুর ৪.৫, অন্যদের ৪.৭ বা ৪.৮ ফিট। বুঝতেই পারছিস এই জেনারেশনেও ওই আফ্রিকান সাভানায় কার advantage .
চন্দন: যার গলা ৪.৮ বুঝেছি। যমজ না হলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ছোট ছোট তফাৎ বা variation থাকবেই আর তার ওপর ভিত্তি করে ওই পরিবেশে কার বেশি সুবিধে দেখে natural selection হবে । survival of the fittest . প্রকৃতি select করছে ওই পরিবেশে কে better বাঁচবে। যে better বাঁচবে তার ছেলেমেয়ে বেশি হবে। আর ছেলেমেয়েদের মধ্যে সেই বিশেষত্ব (এক্ষেত্রে গলার হাইট ) প্রকাশ পাবে।
নন্দন: exactly . বিবর্তনের এই চিরন্তন খেলা গত ৪০০ কোটি বছর ধরে চলছে এবং চলবে। আর তাই কয়েক মিলিয়ন বছর পরে একটা জেব্রা-জাতীয় পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়ে এল এক নতুন প্রজাতি (species) আধুনিক জিরাফ - যাদের গলার হাইট এখন ৭ ফিটেরও বেশি। বিজ্ঞানীদের চোখে সেই প্রাগৈতিহাসিক পূর্বপুরুষ আর উত্তরপুরুষ আধুনিক জিরাফ একই পরিবারের প্রাণী।দুজনের গলাতেই একই ধরণের হাড় আছে, কিন্তু বিবর্তনের রাস্তায় চলতে চলতে সেই সব জিরাফ তনয় advantage পেয়েছে যাদের গলার হাড় অল্প হলেও লম্বা ছিল। আর তাই আজ , আধুনিক জিরাফ আফ্রিকার প্রান্তরে ওই লম্বা লম্বা গাছগুলির মগডালের পাতাও খেতে পারে, যেটা ওদের পূর্বপুরুষ কোনো মতেই পারতো না। আধুনিক জিরাফ অর্জন করেছে - যাকে বলে একটা gain-of-function.
![]() |
বিবর্তন ফসল - আজকের আফ্রিকায় আধুনিক জিরাফ |
চন্দন: কিন্তু ধর, ওই লম্বা লম্বা গাছগুলো মরে গেল। তাহলে তো লম্বা গলার অ্যাডভান্টেজ রইলো না।
নন্দন: হতেই পারে। প্রকৃতি পাল্টাতে থাকে। যদি গাছগুলো সব মরে যায়, তাহলে বলতে হবে পরিবেশ পাল্টে গেছে। এবার এই নতুন পরিবেশে জিরাফের কোন বাচ্ছা বেশি সফল হবে, সেই খেলা শুরু হবে।বলছি না, প্রকৃতির সবকিছু - প্রাণী ও প্রাণহীন - সারাক্ষন ছোটছোট করে পাল্টাতে থাকে। তাই এই বিবর্তন কখনো থামে না।
চন্দন: কিন্তু তাতে তো ওই প্রাণীগুলো মরে যাবে, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
নন্দন: যাবে তো যাবে। প্রকৃতির কিচ্ছু যায় আসে না। গত ৪০০ কোটি বছরে কত প্রাণী এল আর গেল, কিছু যায় আসে কি? এই তো ডাইনোসররা এতো কোটি বছর রাজ্যত্ব করে হারিয়ে গেছে। আমাদের পূর্বপুরুষ হোমো ইরেক্টাস, বা জ্ঞাতি নিয়ান্ডার্থালরা হারিয়ে গেছে। গেছে তো গেছে। পৃথিবীর কিছু যায় আসে? আরে পৃথিবীর তো প্রাণ বা উপলব্ধি নেই যে 'ভাল খারাপ লাগবে'। এটা শুনতে একটু নিষ্ঠুর মনে হয় - কিন্তু nature is supremely indifferent.
চন্দন: হমমম। ...কিন্তু, এই variation হয় কি করে? আর এর সঙ্গে জিনোমের কি সম্পর্ক?
নন্দন: ভাল বলেছিস। answer is জিনোম হচ্ছে বাড়ির প্ল্যান, আর সেই প্ল্যান দিয়ে ফাইনালি তৈরী হয় প্রাণীর শরীর। সুতরাং শরীরে যা ছোট ছোট তফাৎ দেখছিস (জিরাফের ক্ষেত্রে গলা) সেটা হচ্ছে কারণ প্রতি জেনারেশনে জিনোমে ছোট ছোট তফাৎ হতে থাকে। বলতে প্যারিস জিনোমের বিবর্তন চলতেই থাকে। ছোট ছোট তফাৎ জমতে থাকে। যেখানে এককালে A ছিল সেটা G হয়ে যায়, যেখানে ৫ লক্ষ্ বছর আগে T ছিল সেটা A হয়ে যায়। আর যেহেতু জিনোম হচ্ছে প্রোটিন তৈরির কোড, তাই জিনোমের ছোট ছোট পরিবর্তন মানে শরীরে কোষে যে প্রোটিন তৈরী হয় তাতেও ছোট ছোট চেঞ্জ জমতে থাকে, এবং তাদের ক্ষমতাও অল্প অল্প করে পাল্টাতে থাকে। অনেক সময়ই এরকম পাল্টে যাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে , হয় ও। কিন্তু কালেভদ্রে এমন একটা টুক করে পরিবর্তন হয় যে ওই environmentএ সেটা একটা advantage দেয়। তখন যে ব্যক্তিবিশেষের শরীরে ওই তফাৎটা হয়েছে তার সুবিধে হতে পারে। survival of the fittest .
চন্দন: বুঝলাম। শরীরে বিবর্তন হচ্ছে আসলে প্রোটিনের কাজের বিবর্তন আর সেটা সম্ভব যদি জিনোমে বিবর্তন হয়, কারণ জিনোমের নির্দেষ অনুযায়ী প্রোটিন তৈরী হয়। ....ok . কিন্তু জিনোম পাল্টায় কেন?
নন্দন: তুই আজ মুডে আছিস। দারুন interact করছিস। আবার ভাল প্রশ্ন। উত্তর হচ্ছে - এটা জিনোমের একটা ধর্ম। ....বুঝলি না তো? খুব সোজা করে বললে, এক জেনারেশন থেকে অন্য জেনারেশনে যখন তৈরী হয় তখন জিনোম কপি করতে হয়। এই কপি করার সময়ে কিছু কিছু অক্ষর ভুল কপি হয়ে যায়। সবসময় হয় না, কিন্তু মাঝে মাঝে হয়ে যায়। হয়ত জিনোমে সব মিলিয়ে ৭০০টা A ছিল। ৬৯৮টা হুবহু কপি হল , কিন্তু একটা A ভুল করে G হয়ে গেল, আরেকটা A হয়ে গেল T . এবং এই যে হল, বিবর্তনের খেলা শুরু হল।
চন্দন: ভুল কপি হয় কেন ?
নন্দন: এটাও বস্তুর একটা ধর্ম। প্রাণীদেহের অনুসেচকদের (enzyme) ধর্ম। সব কাজ করে, দারুন করে, কিন্তু মাঝে মধ্যে দু-একটা ভুল হয়ে যায়। ব্যাপারটা কেমন জানিস, ধর বিরাট কোহলি যতই ভাল খেলুক, সেঞ্চুরি হাঁকাক, ছয় মারুক কিন্তু ইনিংসে একটা-দুটো শট একটু লুজ খেলা হয়ে যেতেই পারে। সেটা ঠিক দোষ নয়, হতেই পারে। না হলে তো জীবনে কোনোদিন আউট হতো না। একই জিনিস মলিকিউলদের দুনিয়ায়। জিনোম কপি করার সময়ে মাঝে মধ্যে একটু আধটু ভুল হয়ে যায়।
চন্দন: শুরু করেছিলাম করোনাভাইরাস দিয়ে ....কোথায় যে তুই গেলি ?
নন্দন: আরে এটা না বললে হত ? এটাই তো ফাউন্ডেশন। ঠিক আছে, তাহলে ভাইরাসে ফিরি। প্রকৃতিতে কোন একটা (বা একাধিক) ভাইরাস ছিল, কোন এক প্রাণীতে। আগে একটা ব্লগে লিখেছিলাম যে ভাইরাসরা যখন কোন কোষে ঢোকে ওরা ওই কোষ হাইজ্যাক করে নিয়ে নিজেদের কপি বানাতে শুরু করে। তারপর একসময় ওই কোষের ঝিল্লি ফাটিয়ে বেরিয়ে আসে আর পাশের কোষকে আক্রমণ করে। এই চলতে থাকে, এই হল ইনফেকশন।
চন্দন: বুঝেছি। তুই এবার বলতে চাইছিস যে ওই যে ভাইরাস কপি তৈরী হয় সেই সময় কিছু কপিতে ছোট ছোট ভুল ঢুকে যায়।
![]() |
ছবি ২: যখন এত নতুন ভাইরাস তৈরী হচ্ছে, তখন কয়েকজনের মধ্যে জিনোম অল্প করে পাল্টে যাচ্ছে। |
চন্দন: লাভটা কি?
নন্দন: লাভ বলে লাভ। একটা নতুন প্রজাতি - মানুষ। যার এত এত কোষ।আর যে এখনো ওকে প্রতিরোধ করতে পারে না। এতো বাম্পার লটারির বাবা।জিরাফের মগডালের পাতা পাবার মত । ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির অফুরন্ত আধার। এ যেন সেই পিজারো আমেরিকায় গিয়ে পড়েছে - আর গিয়ে দেখে ইনকাদের সোনার সাম্রাজ্য আছে, এল ডোরাডো আছে, কিন্তু ওদের কোনো বন্দুক কামান নেই। ব্যাস, আর কি ! লুঠ।
চন্দন : তা নতুন কোরোনাভাইরাসের জিনোম অন্য ভাইরাল জিনোমদের পাশাপাশি ফেলে sequence alignment করে কি পাওয়া গেল ?
নন্দন: জানুয়ারি মাসের গোড়ায় যখন উহানের রুগীদের শরীর থেকে পাওয়া ভাইরাস বের করে তাদের জিনোম পাঠোদ্ধার হল প্রথমেই যেটা নিশ্চিত করে জানা গেল সেটা হল এটা একটা নতুন কোরোনাভাইরাস। ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপে দেখে আগেই মনে হয়েছিল, এবার sure হওয়া গেল। দুই, আজ অবধি যত করোনা ভাইরাস জানা আছে (যেমন আমাদের সাধারণ সর্দি ও মাঝে মাঝে কিছু কোরোনাভাইরাসের জন্যে হয় ) বিজ্ঞানীরা নানা হিসেবে মিলিয়ে তাদের চারটি বড় genusএ (plural : genera ) ভাগ করেছেন - আলফা-কোরোনাভাইরাস , বিটা-কোরোনাভাইরাস, গামা-কোরোনাভাইরাস ও ডেল্টা-কোরোনাভাইরাস। এর মধ্যে গামা আর ডেল্টা ভাইরাসরা সাধারণত পাখিদের আক্রমণ করে, আর আল্ফ়া আর বিটা স্তন্যপায়ীদের শরীরে রোগ বানায় । এক্ষেত্রেও দেখা গেল যে নতুন কোরোনাভাইরাস বিটা genus র অন্তর্গত। শুধু তাই নয়, ২০০২তে যে SARS ভাইরাস (এখন বলা হচ্ছে SARS classic) মহামারী করেছিল সেও বিটা genusর মেম্বার এবং তার জিনোমের সঙ্গে এই নতুন ভাইরাসের ভাল রকম মিল আছে - প্রায় ৭৯% . সেই জন্যে নতুন কোরোনাভাইরাসের নাম দেওয়া হল SARS-CoV-২.
চন্দন: তাহলে মানুষকে আক্রমণ করে এই দুটো কোরোনাভাইরাস?
নন্দন: না। সব মিলিয়ে ছটা। দুটো আল্ফ়া - নাম HCoV-NL63 আর HCoV- 229E, আর দুটো বিটা - নাম HCoV-OC43 আর HCoVHKU1. এই চারটে ইনফেক্ট করলে হালকা সর্দি ঠান্ডা-লাগা জ্বর হয়, সিরিয়াস কিছু না। কিন্তু অন্য দুটো বিটা ভাইরাস মারাত্মক। এক হল ২০০২র SARS classic আর একটা হল ২০১২র Middle East Respiratory Syndrome (MERS ) . এ দুটো থেকে ইনফেকশন হলে সেটা অনেক বেশি সাংঘাতিক। সাত নম্বর হল আমাদের নতুন কোরোনাভাইরাস - SARS-CoV-২.
চন্দন: কিন্তু এটা এল কথা থেকে? SARS classic থেকে বিবর্তিত হয়ে?
নন্দন: না। দুটোর মধ্যে মিল থাকলেও অত মিল নেই যে সরাসরি এক বংশের ভাইরাস। সেটা বিজ্ঞানীরা দেখেই বুঝে যান। তবে কার সঙ্গে বেশি মিল সেটা বেশি খুঁজতেই হল না। ডেটাবেসেই ছিল। আরেকটা বিটা কোরোনাভাইরাস যার বৈজ্ঞানিক নাম RaTG13 .
চন্দন : কিন্তু, এটা কোন প্রাণীর ভাইরাস? বিটা যখন তখন নিশ্চয়ই কোনো স্তন্যপায়ী।
নন্দন: yes boss . এক আশ্চর্য স্তন্যপায়ী জীব।সুকুমার রায় যাকে বাংলা সাহিত্যে অমর করে দিয়েছেন একটি লাইন দিয়ে - 'বাদুড় বলে ওরে ভাই সজারু, আজকে রাতে দেখবে একটা মজারু'।
চন্দন: বাদুড়? কোন বাদুড়?
নন্দন: ২০১৩ সালে চীনের ইউনান প্রদেশে Rhinolophus affinis প্রজাতির একটি বাদুড় থেকে বিজ্ঞানীরা ভাইরাস বের করে স্টাডি করেছিলেন। সেই রেজাল্ট ডেটাবেসে ভরা ছিল। দেখা গেল নতুন কোরোনাভাইরাসের সঙ্গে এই বাদুড় ভাইরাস RaTG13র ৯৬% সাদৃশ্য।
.... (চলবে)
Translation please :)
ReplyDeleteTranslation please :)
ReplyDelete