Wednesday, May 20, 2020

কোরোনাভাইরাস - বিবর্তনের আশ্চর্য ফসল না গোপন অস্ত্র ?- দ্বিতীয় কিস্তি 


(আগের ব্লগের থেকে চলছে) ....

চন্দন: ৯৬% তো জেনেটিকালি বেশ ভালো মিল রে !

নন্দন: সে আর বলতে।  এই দিক ওই সব ভাইরাসদের বংশের ডালপালা (ছবি ১)।  লক্ষ্য কর, বাদুড়ের RaTG13 ভাইরাস কিরকম উহানের রুগীদের শরীরে যে নতুন কোরোনাভাইরাস পাওয়া গেসল ঠিক তার পাশেই। একদম নিকট আত্মীয়।
ছবি ১: বিটাকরোনা ভাইরাস বংশ। 
উহানের রুগীদের শরীর থেকে পাওয়া নতুন ভাইরাসের ঠিক পাশেই বাদুড়ের RaTG13 ভাইরাস। Zhou, P. et al (2020)  Nature. 579, 270-273 থেকে নেওয়া। 

চন্দন: তাহলে তো মিলেই গেল।

নন্দন:  না না।  অত অল্পতে বিজ্ঞানীরা সন্তুষ্ট হন না ।  পিকচার অভি বাকি হয়, মেরে দোস্ত। মনে আছে নিশ্চয়ই বললাম যে নতুন কোরোনাভাইরাসের জিনোমের সঙ্গে বাদুড়দের RaTG13 ভাইরাসের জিনোম ৯৬% মেলে, আর ২০০২র প্রথম সার্স ভাইরাসের সঙ্গে ৭৯% মেলে। ভালো কথা, তবে মনে রাখতে হবে এগুলো হচ্ছে পুরো জিনোমের জন্যে গড় বা অ্যাভারেজ সংখ্যা।  মানে, যদি নতুন ভাইরাস আর RaTG13 ভাইরাস দুজনের জিনোমের সাইজ হয় ১০০ নিউক্লিওটাইড তাহলে তাদের মধ্যে ৯৬টা নিউক্লিওটাইড এক , identical.

চন্দন: বুঝেছি। আর নতুন ভাইরাস আর প্রথম সার্স ভাইরাসের মধ্যে ৭৯টা নিউক্লিওটাইড মিলে যাবে।

নন্দন: হ্যাঁ , কিন্তু এবার প্রশ্ন হচ্ছে জিনোমের ওসব জায়গায় কি equally এই মিল থাকবে নাকি কোনো যায় ৯০%, কোনো জায়গায় ৬৫% হবে?  সেটা কিন্তু গড় দেখে বোঝা যাবে না।  একটু তলিয়ে দেখতে হবে।

চন্দন: হুম।  বুঝেছি। ডিটেলে অনেক জিনিস ধরা পড়ে।

নন্দন: ঠিক তাই।  এই গ্রাফটা দেখ (ছবি ২) ।  বেশ সুন্দর, তথ্যসমৃদ্ধ গ্রাফ এঁকেছে।  কি দেখাচ্ছে - নতুন কোরোনাভাইরাসকে ১০০% রেখেছে।  এবার x axis বরাবর দেখে যাচ্ছে অন্য ৪টি বাদুড়ের ভাইরাস আর ২০০২সার্স ভাইরাসের সঙ্গে এর জিনোমের কোথায় কতটা মিল।y axis এ % রেখেছে। সোজা জিনিস, একবার ভাল করে দেখ।  দেখ, ওপরের নীল লাইনটা (যেটা ৯০% র ওপরে চলছে সেটা হল নিকতম আত্মীয়  RaTG13. আর অন্য গোলাপি, খয়েরি, সবুজ হল অন্য বাদুড়ে ভাইরাস। আর লাল হল ২০০২-সার্স।  তাহলে একমাত্র   RaTG13 ছাড়া অন্যদের সঙ্গে কোথাও বেশি কোথাও কম মিল।  ৫৫% থেকে ৮০% র মধ্যে।
ছবি ২: নতুন করোনা র জিনোমের সঙ্গে অন্য ভাইরাল জিনোমের মিল অমিল। স্পাইক প্রোটিনের জিন সবার থেকে আলাদা।  Zhou, P. et al (2020)  Nature. 579, 270-273 থেকে নেওয়া। 

চন্দন: got it . কি সুন্দর গ্রাফটা !

নন্দন: দারুন, এগুলোই শিক্ষণীয়।  আমাদের ছাত্রদের শেখা উচিত, শুধু গাঁতালে আর কপি পেস্ট মারলেই চলে না। কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ কর, গ্রাফে একটা জায়গা আছে যেখানে সবার সঙ্গে নতুন কোরোনাভাইরাসের খুব বেশি অমিল।  এমনকি RaTG13র সঙ্গেও একটু অমিল দেখা যাচ্ছে।

চন্দন: দেখেছি।  ওই যে একটা sharp নেমে যাচ্ছে x axis এ ২০০০০ আর ২৫০০০র মধ্যে।

নন্দন: exactly. এবার গ্রাফের ওপরে জিনোমের জিনগুলো সাজানো আছে দেখ।  বক্স বক্স করে।  ওই জায়গাটায় কোন প্রোটিনের জিন দেখছিস?  S বা স্পাইক প্রোটিন।

চন্দন: স্পাইক প্রোটিন মানে তো যেগুলো ওই পায়ার মত ভাইরাস থেকে বেরিয়ে থাকে।  যে ছবিটা রোজ নিউজ চ্যানেলে দেখায়।

নন্দন:  তা তো বটেই। আর ওই স্পাইক হল সেই চাবি যা দিয়ে নতুন কোরোনাভাইরাস ঝট করে আমাদের কোষের আসে ACE ২ তালা খুলে ঢুকে পড়ে। স্পাইক তো সব কোরোনাভাইরাসের থাকে।  কিন্তু নতুন করোনার স্পাইক বাকিদের থেকে আলাদা। উপমা দিলে কেমন হবে বল তো - কোন একটা পরিবারে সবাই মোটামুটি ফর্সা, কিন্তু মাঝারি হাইট ৫.৭- ৫.১০। আর একজন আছে সেও ফর্সা, কিন্তু তার হাইট ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি।এটাই হল মজা।

চন্দন: কিন্তু। ..কিন্তু  .... ওর কাছেপিঠের আত্মীয় ভাইরাসে যদি ওইরকম স্পাইক প্রোটিনের জিন না থাকে তাহলে ওটা নতুন করোনা পেল কোথা থেকে?

নন্দন: এইটাই তো কথা। আর তো কোনো ভাইরাস দেখছি না।  তাহলে? এবং তখনই বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুললেন - নিশ্চয়ই প্রকৃতিতে এমন কোন ভাইরাস আছে যার সঙ্গে এই স্পাইক মিলে যায়।  কিন্তু সেই ভাইরাসের জিনোম আমাদের ডেটাবেসে নেই।

চন্দন: এরকম হতে পারে?

নন্দন: কেন হবে না ? খুব বেশি চান্স।  পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ প্রাণী আছে, কয়েক কোটি ধরণের ব্যাকটেরিয়া আছে, যত ব্যাকটেরিয়া সম্ভবত তার ১০গুন্ ভাইরাস আছে।প্রকৃতির সম্ভার সুবিশাল।  গত কুড়ি বছরে বিজ্ঞানীরা কয়েক হাজার জিনোম সিকোয়েন্স করেছেন বটে, কিন্তু সে তো সিন্ধুতে বিন্দু।

চন্দন: দাঁড়া দাঁড়া।  এই তো দেখলাম বাদুড়ের RaTG১৩ র সঙ্গে ওই স্পাইক জিন ছাড়া খুব মিল।  আবার এখন বলছিস স্পাইক জিন আসবে আরেকটা অজানা ভাইরাস থেকে? একি একি ভাইরাস-ভাইরাস হাইব্রিড নাকি?

নন্দন: হা হা হা হা। অনেকটা ঠিকই ধরেছিস।  এবং এটাও ভাইরাসদের মধ্যে মাঝে মধ্যেই ঘটে। বিজ্ঞানীরা এঁকে বলেন antigenic shift .

চন্দন:  antigenic shift ? তাতে কি হয়?

নন্দন: ব্যাপারটা বেশ অভিনব। কি জানিস, ধর কোন একটা জন্তু আছে।  তার একই কোষে একই সময়ে দুটো আলাদা প্রজাতির ভাইরাস একসঙ্গে ঢুকে পড়েছে।ভাইরাস A আর ভাইরাস B.  just ঘটনাচক্রে এটা হয়ে গেছে। এবার তুই জানিস যে যে কোন কোষে একটা ভাইরাস ঢুকলে সে ওই কোষটাকে হাইজ্যাক করে ফেলে আর হুকুম দে শুধু নতুন ভাইরাস বানাতে।  ভাইরাল জিনোম, ভাইরাল প্রোটিন সব তৈরী হয়।  এবার এক্ষেত্রে কি ? দুটো ভাইরাস ঢুকেছে।  দুজনের প্রোটিন জিনোম তৈরী হচ্ছে একই কোষের মধ্যে।  এমনিতে হিসেবে মত সব ভাইরাস ঠিকঠাক প্যাক হবার কথা, Aর সঙ্গে B মিশে যাবে না।  কিন্তু, ওই মাঝে মাঝে একটু আধটু ভুল হয়ে যায়। A ভাইরাসের জিনোম একটা ছোট্ট অংশ টুক করে B ভাইরাসের জিনোমের সঙ্গে জুড়ে গেল।  একটা হাইব্রিড হয়ে গেল। ধর, এই হাইব্রিডের ৮৮% হল B ভাইরাস কিন্তু একটা ছোট্ট ১২% হল A ভাইরাস (ছবি ৩)।
ছবিটি ৩: Antigenic shift . দুটো আলাদা ভাইরাসের জিনোমের মধ্যে দেওয়া-নেওয়া দিয়ে এক নতুন ভাইরাসের সৃষ্টি। https://microbenotes.com/differences-between-antigenic-shift-and-antigenic-drift/ থেকে নেওয়া।  


চন্দন: যাহ সালা! কি করে হল?

নন্দন: বেশি বলব না।একে বলে homologous recombination. যারা মলিকিউলার বায়োলজি পড়ে তারা জানে। কেমন জানিস?  ধর, জেরক্সের দোকানে পাশাপাশি দু সেট কপি হচ্ছে।দুটোই ১০ পাতার, ৫০টা করে কপি হবে । টোটাল ১০০.   হয়ে গেলে দুটো সেট আলাদা আলাদা করে স্টেপল করে দেবে। এবার দোকানদার এটা করতে গিয়ে  ৪৮টা ঠিক করলেন, কিন্তু ২টো কপিতে এক সেটের ৩ নম্বর পাতা অন্য সেটে ভুল করে ঢুকিয়ে দিয়ে স্টেপল করে দিয়েছেন।

 চন্দন: এটা ভাল দিয়েছিস।

নন্দন: এটা অবশ্য আমি এক জায়গায় সেদিন পড়েছি। উপমাটা খুব ভাল লেগেছিল তাই মনে পড়ে গেল। তাহলে মোদ্দা কথা এমন হতে পারে।  আর রেজাল্ট হল একটা নতুন হাইব্রিড ভাইরাস তৈরী হয়ে যেতে পারে চট  করে।

চন্দন: আচ্ছা, এটা মানুষ বা অন্য প্রাণীতে হয়?

নন্দন: না ভাই। এক ডিম্বাণুতে দুজনের শুক্রাণু ঢুকে গিয়ে হাইব্রিড করে দিলে চাপ হয়ে যাবে।  ভাগ্যিস হয় না। এটা ভাইরাসদের ব্যাপার। ফিরে আসি আমাদের টপিকে - তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে স্পাইক জিন কোন ভাইরাস থেকে এল? এইখানে বলে রাখি একটা জিনিস বিজ্ঞানীরা  আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলেন - যে নতুন কোরোনাভাইরাস আদতে বাদুড় থেকে আসতে পারে কিন্তু সম্ভবত আরেকটা কোন প্রাণী জড়িত।  এরকম ভাবার কারণ ছিল।  ২০০২র সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুড় থেকে civet নামের ভামবেড়াল , আর তারপর civet থেকে মানুষে এসেছিল।  আর ২০১২র MERS ভাইরাস প্রথমে বাদুড় থেকে উট , আর তারপর উট থেকে মানুষে লাফ মেরেছিল।  তাছাড়া উহানের যে প্রাণী বাজার ডিসেম্বর মাসে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে সেখানে অনেক জন্তু জানোয়ার বিক্রি হলেও বাদুড় সেভাবে হয় না।  তাই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন আরেকটা কোনো প্রাণী আছে।

চন্দন: এই প্রাণীটা হচ্ছে প্যাঙ্গোলিন ? তাই তো ? কাগজে পড়েছি।
ছবি ৪: মালায়ান প্যাঙ্গোলিন। https://en.wikipedia.org/wiki/Sunda_pangolin#/media/File:Pangolin_borneo.jpg
নন্দন: হ্যাঁ, মালায়ান প্যাঙ্গোলিন, বৈজ্ঞানিক নাম Manis javanica (ছবি ৪) ।  প্রথম দিকে কিছু metagenomic search (ডিটেল তোর জানার দরকার নেই) করে বিজ্ঞানীদের মনে হয় প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে যে ভাইরাস পাওয়া যায় তার সঙ্গে নতুন করোনার মিল অনস্বীকার্য।

চন্দন: আচ্ছা, একটা কথা বল।  এই ভাইরাসের জন্যে প্যাঙ্গোলিনের অসুখ করে না?

নন্দন: করে তো। সেটাই তো পরের ঘটনা।  গত বছর চীনের বন দপ্তর কিছু চোরাশিকারীকে  ধরেছিল যাদের থেকে ২৫টা মালায়ান পঙ্গোলিন পাওয়া গেসল।টেস্ট করে ১৭টার মধ্যে ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল। আর  কয়েক দিনের মধ্যেই,এই ১৭টা প্যাঙ্গোলিন একই রকম ফুসফুস-জনিত অসুখের সিমটম দেখায়।  দেড় মাসের মধ্যে ১৪টা প্যাঙ্গোলিন মরেও যায়।    সেই আক্রান্ত প্যাঙ্গোলিনদের ফুসফুস থেকে যে ভাইরাস পাওয়া যায় তার জিনোমকে নতুন করোনাভাইরাসের সঙ্গে মেলাতে গিয়েই জ্যাকপট! স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে ৯০% র বেশি মিল! এই গ্রাফটা দেখ (ছবি ৫)।  আগের মতোই, তবে এবার প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসকে ১০০% (similarity 1) রেখেছে।  এবার x axis বরাবর দেখে যাচ্ছে অন্য ৪টি বাদুড়ের ভাইরাস, নতুন ভাইরাস আর ২০০২সার্স ভাইরাসের সঙ্গে এর স্পাইক প্রোটিনের জিনের কতটা মিল (similarity) । লাল লাইন হল নতুন কোরোনাভাইরাস।  অন্য লাইনগুলো অন্য ভাইরাস। লক্ষ্য কর, ১৪০০-১৫০০ nucleotide positionএ একটা জায়গা আসে যেখানে শুধু লাল লাইনটা মোটামুটি সিধে থাকে, বাকিগুলো ঝপ করে নেমে যায়।
ছবি ৫: নতুন কোরোনাভাইরাসের স্পাইক জীন কেবল প্যাঙ্গোলিন স্পাইক জিনের সঙ্গেই মেলে।  Xiao, K. et al (2020) Nature - online ahead of print থেকে নেওয়া 

চন্দন: দেখেছি।  কিন্তু এর মানে কি?

নন্দন: মানে হল একমাত্র নতুন কোরোনাভাইরাস (লাল লাইন) আর প্যাঙ্গোলিন ভাইরাস র স্পাইক জীন ওই জায়গায় মিলে যাচ্ছে।  বাকি অন্যদের ক্ষেত্রে ওই অঞ্চলটা আলাদা।

চন্দন: তো?

নন্দন: এটাই তো গোয়েন্দাগিরি রে।  সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন আসে স্পাইক প্রোটিনের ওই জায়গাটার কাজ কি?

চন্দন: স্পাইক প্রোটিনের কাজ তো জানি।  মানুষের কোষে ACE২ প্রোটিনে আটকে যাওয়া।

নন্দন: সে তো বটেই।আগেই বলেছি,  স্পাইক হল চাবি আর ACE ২ হল তালা। কিন্তু এবার প্রশ্ন হচ্ছে, ওই ১৪০০-১৫০০nucleotide position  'চাবি' র কোন অংশ  নির্ধারণ করছে।  সামনে না পেছনে? যে জায়গাটা ভাইরাসে আটকে থাকে? না যেটা ACE২র সঙ্গে খাপে খাপ লেগে যায় ?

চন্দন: ওরে ব্যাটা! ...চুলচেরা বিশ্লেষণ।

নন্দন: একদম।  এটা তো বুঝতেই হবে। আর analysis করে ফল কি বেরোল? দেখা গেল , যে ওই স্পাইকের ওই অঞ্চলটা শুধু যে ACE২ র সঙ্গে bind করে তা নয়, ঠিক ওখানে যে কয়েক অ্যামিনো অ্যাসিড আছে তারা এই খাপে খাপ চাবি-তালা আটকে যাওয়া আর নতুন কোরোনাভাইরাসের আমাদের কোষে ঢুকে পড়ার ব্যাপারে অপরিহার্য।স্পাইকের এই অঞ্চলতার নাম হল Receptor Binding Domain (RBD).  মানে চাবি তো ভালো হতে পারে, একেবারেই চট করে খুলে যায়, আবার অত ভাল নাও হতে পারে, কয়েকবার প্রেসার দিলে তবে তালা খোলে।  কোন চাবি কেমন সেটা চাবির নাকের ডগার খাঁজ ব্যাঁকা শেপ সাইজের ওপর নির্ভর করে।  এখানেও তাই।

চন্দন: বুঝেছি ভাই।  তুই বলতে চাইছিস  অন্য ভাইরাসের  স্পাইক এমন যে ACE২ তালার খাপে খাপ লাগতে একটু মেহনত করতে হয়। কারণ ওদের RBDর অ্যামিনো অ্যাসিড'র তফাৎ আছে। কিন্তু, নতুন কোরোনাভাইরাস আর প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসর স্পাইক এত RBDর অ্যামিনো অ্যাসিড এমন ভাবে fine-tuned যে এক সেকেন্ডে তালা খুলে যায়।

নন্দন: হ্যাঁ।  এবং সেই জন্যেই জিনিসটা এতো ছোঁয়াচে।  ২০০২র সার্স ভাইরাস মারাত্মক ছিল, কিন্তু কম ছোঁয়াচে। নতুন কোরোনাভাইরাস অতটা মারাত্মক নয় (৯৫% লোক সেরে যাবে), কিন্তু এই প্যাঙ্গোলিন-মার্ক RBDটা এমন পেয়েছে যে অনায়েসে কোষে ঢুকে পড়ছে।  তাই প্রচন্ড ছোঁয়াচে।

চন্দন: কি বজ্জাত রে!

নন্দন: ভালো, খারাপ, বজ্জাত ভদ্র ব্যাপারই নয় এটা।  ওইসব কথাগুলো মানুষের ব্যবহারের ক্ষেত্রে খাটে। বিবর্তন একটা বায়োকেমিক্যাল খেলা , যার কোনো বিচার বুদ্ধি নেই।  চলছে চলবে।  যাক সে কথা।  তাহলে এখন অবধি রিসার্চ করে কি জানা গেল? এমন একটা নতুন বিটা  করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে যার জন্যে অনেকের বাজে রকমের নিউমোনিয়া হয়।  দুই, এর জিনোমের  সঙ্গে ২০০২র সার্স ভাইরাসের মিল ৭৯% কিন্তু বাদুড়ের একটি  কোরোনাভাইরাসের ৯৬% মিল। তিন, একটাই অঞ্চলে বাদুড় ভাইরাস আর নতুন ভাইরাসের মিল কম - স্পাইক প্রোটিনের জিনে।  চার, স্পাইক প্রোটিনের জিনের ভাল মিল পাওয়া গেল একটি প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসের স্পাইক জিনের সঙ্গে।

চন্দন: বাবা! তাই বলছেন যে এটা মূলত বাদুড়ে ভাইরাসের মত, কিন্তু ওই একটা অঞ্চল প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসের মত। আচ্ছা, বাদুড়ের ভাইরাস থেকে অসুখ হয়?

নন্দন: না, এবং সেটাই কথা।  শুধু বাদুড় ভাইরাস চলে এলে আমাদের মহামারী হত না। সম্ভবত antigenic shift হয়ে প্যাঙ্গোলিন ভাইরাস থেকে ওই স্পাইকজীনের RBD অঞ্চলটা এসেছে বলেই এ এমন ছোয়াঁচে হয়ে উঠেছে।দুটোর RBDর মাত্র একটা অ্যামিনো অ্যাসিড তফাৎ। আর সব এক। প্রকৃতির চিরন্তন ভাঙা-গড়ার খেলা।

চন্দন: আচ্ছা, ভাইরাসটা বাদুড় থেকে প্যাঙ্গোলিনে গেল কি করে? বাদুড় তো প্যাঙ্গোলিন খায় না, প্যাঙ্গোলিন ও  বাদুড় খায় না।

নন্দন: হা হা।  তা খায় না ঠিকই।  তবে দুটো প্রাণীই মোটামুটি একই পরিবেশে থাকে।  দুটোরই বাস চীন ও পূর্ব এশিয়ায়।  দুটোই নিশাচর, পোকা মাকড় খায়, ফল খায়।  একই বনাঞ্চলের প্রাণী। কার ফেলে যাওয়া খাবার কে খেয়েছে, বা কার মল থেকে ভাইরাস কার খাবারে মিশে গেছে। ....খুবই সম্ভব।  এ ভাবেই ভাইরাসরা ঘুরে বেড়ায়।

চন্দন: বাহ্! এটা একটা ভাল ecological ব্যাখ্যা।

নন্দন: হ্যাঁ।  এত বিজ্ঞানীরা লিখেছেন পেপারে।.....কিন্তু আরেকটা ব্যাপার আছে। ....চাবিটার আরেকটা খেল আছে।  সেটাও ফাটাফাটি।

চন্দন:  কি চাবি ভাই এই স্পাইক প্রোটিন।আলী বাবার চিচিং ফাঁক তো এর কাছে কিছুই নয় !

নন্দন: এই ছবিটা দেখ।  আরেকটা রিসার্চ পেপার থেকে নেওয়া।    লক্ষ করে দেখ, স্পাইক প্রোটিনকে বিজ্ঞানীরা দুভাগে ভাগ করেছেন - S1 আর S2. S1এ আছে RBD . দেখেছিস? (ছবি ৬)
ছবি ৬: নতুন কোরোনাভাইরাসের স্পাইক জিনে polybasic cleavage site. অন্য ভাইরাসদের নেই।  Anderson KG et al (2020) Nature Medicine. 26, 450-452 থেকে নেওয়া। 
চন্দন: ঠিক আছে।

নন্দন: S2 দেখ।  কয়েকটা তিনটে দাঁড়ি কাটা আছে। আর স্পাইক প্রোটিনের ওই অঞ্চলটা এনলার্জ করে দেখিয়েছে, একদম তলায় যে row করে অক্ষরগুলো সেগুলো হচ্ছে অ্যামিনো অ্যাসিড'র সারি।  amino acid sequence. দেখ, নতুন করোনা আছে, বাদুড়ের RaTG13 আছে, প্যাঙ্গোলিন ভাইরাস আছে, ২০০২র সার্স ভাইরাস আছে।

চন্দন: দেখেছি।

নন্দন: এবার লক্ষ কর, একটা জায়গা দেখবি যেখানে একমাত্র নতুন করোনা ভাইরাসের সারিতেই পাঁচটা অক্ষর PRRAR, অর্থাৎ পাঁচটা অ্যামিনো অ্যাসিড আছে।  তলার অন্যগুলো, এমনকি প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসও খালি, P আছে, আর শেষে R আছে, কিন্তু মাঝখানে খালি।  ব্ল্যাংক, তাই - সিম্বল দিয়ে রেখেছে। এর মানে হল ওই পরপর পাঁচটা অ্যামিনো অ্যাসিড একমাত্র আমাদের নতুন কোরোনাভাইরাসের আছে। আর ওপরে লেখা আছে polybasic cleavage site.

চন্দন: এই polybasic cleavage siteর কাজ কি?

নন্দন: এ হচ্ছে নতুন কোরোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের গোপন অস্ত্র। কি জানিস, অনেক প্রোটিন থাকে যারা তৈরী হয়, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নিজে থেকেই active হতে পারে না।  যেমন ধর আমরা সবাই স্কুলের বইতে পড়েছি পেটে আর স্মল ইন্টেস্টাইনে  (ক্ষুদ্রান্ত্রে) পেপসিনোজেন আর ট্রিপসিনোজেন নামের উৎসেচক প্রথমে inactive অবস্থায় নিঃসৃত হয়।  তারপর তাদের একটা ছোট্ট অংশ ছেঁটে ফেলে দিলে সেগুলো active উৎসেচক পেপসিন আর ট্রিপসিন হয়ে ওঠে।  পড়েছিলি মনে আছে?

চন্দন: মনে পড়ছে।  পেটের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড পেপসিনোজেনকে পেপসিন করে দেয়।

নন্দন: একশোয় একশো।  ঠিক একই কথা স্পাইক প্রোটিনের ক্ষেত্রে লাগে।এমনিতে ও ACE২ গায়ে আটকাতে পারবে না, তালাও খুলবে না।  কিন্তু আমাদের শরীরের অনেক কোষকলায় Furin  নামের একটি বিশেষ উৎসেচক (enzyme)  পাওয়া যায়, আর Furin ওই PRRAR ঠিক চেনে।  ফুরিন এসে ওই জায়গাটা কুচ করে কেটে দেয় , আর তখনই একটিভ হয়ে ওঠে করোনার স্পাইক।

চন্দন: যেন, একটা স্প্রিংকে চেপে রেখে ছেড়ে দেওয়া হল।

নন্দন: একদম।  একজন বিজ্ঞানী বর্ণনা করেছেন এ হল আমাদের বোতাম-টেপা ফোল্ডিং ছাতার মত. বন্ধ ছিল, কিন্তু বোতাম টিপতেই খুলে গেল।  ছাতা রেডি। ফুরিন অনেক কোষে পাওয়া যায়।  যেমন ফুসফুসে। বুঝতেই পারছিস, কিরকম advantage . কোন মতে নাক দিয়ে মুখ দিয়ে ঢুকতে পারলেই হল।  ACE ২ ও আছে, ফুরিন ও আছে।  চাবি তালা, চিচিং ফাঁক।

চন্দন: অন্য ভাইরাসগুলো তাহলে ঢুকবে কি করে? ওদের তো  polybasic cleavage site নেই।

নন্দন: সেটাই তো।  নেই বলেই তো ওরা হয় কোন রোগ করতে পারে না, কিংবা এতটা ছোয়াঁচে নয়।  একটা মাত্র R আছে, সেটাকে কিছু উৎসেচক চেনে। কিন্তু ওই পজিশনে polybasic cleavage siteর মত এতো চট করে কাটা যায় না।  একটু সময় লাগে।  তাই অন্য ভাইরাস এতো ছোয়াঁচে নয়।  নতুন কোরোনাভাইরাস যে  একটি দারুন RBD ও একটি polybasic cleavage site একসঙ্গে বাগিয়েছে সেটাই ওকে প্রতিযোগিতায় অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে। বায়োলজিতে যাকে বলে gain of function.  ভেবে দেখ, ও কিন্তু আমাদেরই দুটো গুরুত্ব পূর্ণ প্রোটিন - ACE২ আর ফুরিন - ব্যবহার করছে আমাদেরই বিরুদ্ধে।

চন্দন: বাবা! ক্ষুদ্র বলিয়া অবজ্ঞা করিও না।  আচ্ছা, অন্য কোন ভাইরাসে এরকম polybasic cleavage site পাওয়া যায়?

নন্দন: যায় বইকি। কিছু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে পাওয়া যায়, এবং সেগুলোই বেশি ছোঁয়াচে। ব্যাপারটা নতুন নয়, বলতে পারিস old wine in new bottle. কিন্তু সেই জন্যেই বিজ্ঞানীরা দেখেই চিনতে পেরেছেন।  নতুন কোরোনাভাইরাস প্রকৃতিতে নতুন, কিন্তু ও যে রাস্তা ধরে বিবর্তিত হচ্ছে সেটা নতুন নয়।

চন্দন: কিন্তু, RBD না হয় এসেছে প্যাঙ্গোলিন ভাইরাস থেকে। এই polybasic cleavage site কোন ভাইরাস থেকে এলো?

নন্দন: এইটা খুব ভালো প্রশ্ন, এবং তুই যদি এক সপ্তাহ আগে করতিস উত্তর দিতে পারতাম না।  এখন পারব।  দেখ, এটা ঠিক যে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যেই পৃথিবীর অনেক ল্যাবের বিজ্ঞানীরা বুঝে গেছেন RBDটা কি ভাবে কাজ করে, কথা থেকে এলো ইত্যাদি।  কিন্তু ওই polybasic cleavage site কোথা থেকে এল এটা বোঝা যাচ্ছিল না।  খুব সম্ভবত কোন এক অজানা ভাইরাস থেকে, কিন্তু কে সে? কোথায় সে? এই চলছিল খোঁজ।

চন্দন: তা রিসেন্ট কি পাওয়া গেল ?

নন্দন: চীনের ইউনান প্রদেশের প্রায় ২২৭টা বাদুড় থেকে ভাইরাস বের করে তাদের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে।  স্টাডি করা হয়েছে। এবং একটি ভাইরাস পাওয়া গেছে যার নাম দেওয়া হয়েছে RmYN02. এ বেশ মজার ভাইরাস। আমাদের নতুন করোনা ভাইরাসের সঙ্গে মিল আছে, আবার নেই ও।  এক এক যায় মিল, এক এক যায় অমিল।  এর RBD বেশ আলাদা। কিন্তু লক্ষণীয় হল এর S1-S2 জংশনে ঐরকম তিনটে অ্যামিনো অ্যাসিড বসানো আছে।

চন্দন: polybasic cleavage site?

নন্দন: ঠিক তা না।  এখানে আছে PAA. তবে খুব যে দূরে নয় বুঝতেই পারছিস। একটা প্রদেশে মাত্র ২২৭টা  বাদুড় খুঁজলে যদি এই PAA পাওয়া যায়, মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে বলা যায় যে আরো কয়েকশো বা এক দু  হাজার বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিন খুঁজলেই ওই PRRAR পাওয়া যাবে। দেখবি, মাস খানেক বা তার আগেই বেরিয়ে যাবে। আরে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা প্রচন্ড fast খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

চন্দন : কিন্তু এসব হল কি করে ? কখন?

নন্দন: ' কি করে' উত্তর হল এটাই তো বিবর্তন। ছোট ছোট variation আর সেই ভিত্তি করে selection. নতুন কোরোনাভাইরাস আদতে একটা বাদুড়ে ভাইরাস। কিন্তু ঘটনাচক্রে mutation আর  recombination antigenic shift করে কিছু unique সিকোয়েন্স পেয়ে গেছে, আর মানুষের কাছে এসে পড়াতে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে গেছে। ওর যা আছে অন্যদের নেই। survival of the fittest.
আর 'কখন'? যা যা বললাম সেটা অনেকটা আমাদের এগিয়ে দিলেও এটা এখনো ১০০% নিশ্চিত নয়।  দেখ, দুটো জিনিস হতে পারে।  হয়,  বাদুড় থেকে প্যাঙ্গোলিন হয়ে আসার পথে এইসব mutation নতুন ভাইরাসে ঢুকেছে। অথবা, দুই, মানুষে ইনফেকশন শুরু গোড়ার দিকে এই সব mutation পেয়ে গেছে। এখন এক আর দুই কোন পথে এসেছে সেইটা আরো অনেক জিনোম ঘেঁটে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন। অবশ্য, যে পথেই আসুক মোদ্দা কথা হল  - mutation হয়েছে, আর  mutation থেকে এসেছে variation, কোন কোন ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন নতুন ক্ষমতা অর্জন করেছে আর সেই ভিত্তি করে natural selection তাকে বংশবৃদ্ধির পথে এগিয়ে দিয়েছে।

চন্দন: সব বুঝলাম, অকাট্য যুক্তি।  কিন্তু একটা কথা বল।  আজকের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং যুগে এসব কি সত্যি কোন বিজ্ঞানীর করা অসম্ভব? তুই তো বলছিস।  একদম আনকোরা নতুন কিছু নয়।  তাহলে কেউ গোপনে কেন করতে পারবে না?

নন্দন: হ্যাঁ। এতক্ষন ধরে যা বললাম সেটা হল গত চারমাসে বিজ্ঞানীরা কি আবিষ্কার করেছেন আর কি conclude করেছেন।  মনে রাখতে হবে এমনি এমনি ভুল ভাল বললে ভয়ানক বদনাম হবে।  পলিটিক্স করলে যা ইচ্ছে বলে পার পাওয়া যায়, বিজ্ঞানে যায় না।  একবার black listএ নাম উঠে গেলে কেউ বিশ্বাস করবে না।  আর তাছাড়া বিজ্ঞানীরা জানেন প্রকৃতির বিশাল সম্ভারের কথা।  সুতরাং সেখানেই প্রথম খুঁজেছেন আর বিজ্ঞানের জানা পথে উত্তর ও পেয়েছেন। তাই দেখবি, ট্রাম্প আর অন্য পলিটিশিয়ানরা যাই বলুক বিজ্ঞানীরা এসব নিয়ে বেশি কিছু বলছেন না।  খালি আমেরিকার ডঃ ফকি বলেছেন এটা ন্যাচারাল ভাইরাস। বেশি বলে লাভ কি? রাজনীতির লোকেরা নিজেদের ধান্দায় চলে। তাই বিজ্ঞান যাই বলুক মানবে না। বয়ে গেল।  তবে হ্যাঁ, বৈজ্ঞানিক দিক থেকে এবার তোর এই প্রশ্নটার উত্তর দেবার সময় এসেছে।

চন্দন: মানে, আমি বলতে চাইছি যে হতেই পারে ন্যাচারাল ভাইরাস। কিন্তু এটাও তো হতে পারে যে কোন গোপন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবে বাদুড় ভাইরাস, পঙ্গোলিন ভাইরাস থেকে cut n paste করে বানিয়ে ফেলেছে?

নন্দন: জানি তুই এটাই বলবি। দেখ, আমি পর পর কয়েকটা পয়েন্ট বলছি।  এবার তুই ভেবে না কোনটা যুক্তি দিয়ে কাটতে পারবি।
১।  এতে কোন সন্দেহ নেই যে নতুন কোরোনাভাইরাস জিনোমের সিংহভাগ হচ্ছে বাদুড়ে ভাইরাস RaTG13র মত।  ঠিক তো? কিন্তু RaTG13 তো কোন মানুষে কোন অসুখ করে না। তার মানে যদি কেউ গোপনে একটা খুব সংক্রামক মারাত্তক ভাইরাস বানাতে চায়, তাহলে সে নিরীহ, অজানা RaTG13 জিনোম ভিত্তি করে বানাতে যাবে কেন? আরো কত ভাইরাল জিনোম তো আছে, ভাইরাস সম্পর্কে আজকে আমাদের যা জ্ঞানভান্ডার তা তো বিশাল। বেশি দূরে যেতে হবে না, নতুন কোরোনাভাইরাসের আত্মীয় ২০০২র সার্স ভাইরাস বা ২০১২র MERS ভাইরাস নিয়ে করলেও তো হত।  তাই না? তরোয়াল যদি বানাতেই হবে সেটা স্টিল দিয়ে বানাবো, কার্ডবোর্ড দিয়ে বানাতে যাব কেন?

চন্দন : তা বটে। ....

নন্দন: শুধু তাই নয়। ২. এরকম একটা অজানা নিরীহ ভাইরাসকে আদৌ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার করে সংক্রামক করা যাবে কি না তারই বা কি গ্যারান্টি? তুই ভাবছিস হয়ে যাবে। ভাবলেই তো হল না।  এটা চেষ্টা করতে বহু মাস থেকে বছর লেগে যেতে পারে। এই ধরনের এক্সপেরিমেন্টকে বলে Reverse genetics এবং সেটা বেশ শক্ত - একটা একটা করে প্রোটিনের জিন বানাতে হবে, তাদের পরীক্ষা করতে হবে এবং তারপর সব জুড়ে আবার দেখতে হবে কাজ হচ্ছে কিনা।  অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ কাজ এবং সাফল্য নাও আসতে পারে -  কারণ ওর মূল কাঠামোই দুর্বল। আরে বাবা, যতই চেষ্টা কর একটা ভেড়া কক্ষনো বাঘ হয়ে উঠতে পারবে না।  এবার ভাব - তুই এরকম এক সিক্রেট প্রজেক্টে কাজ করছিস।  অনেক বছর অনেক ডলার খরচ করে শেষে হাতে এল লবডঙ্কা, কারণ গোড়াতেই গলদ ছিল।  এটা কোন ঘোড়েল অস্ত্র ম্যানুফ্যাকচারার করবে তোর মনে হয়? উত্তর একটাই - না।

চন্দন: না, করবে না। করতে হলে ভাল করেই করবে।

নন্দন:  ঠিক।  তবে শুধু RaTG13 কাঠামো নয়। স্পাইক প্রোটিনের RBDও বলে দিচ্ছে এটা একটা ন্যাচারাল প্রোটিন।  মানুষের তৈরী নয়।

চন্দন: কিরকম?

নন্দন: ৩. দ্যাখ, নিশ্চই মনে আছে স্পাইকের RBD হচ্ছে চাবির একদম সামনের অংশটা, যা দিয়ে অনায়াসে ACE২ তালা খোলা যায়। কারণ,  ওখানে ৬টা অ্যামিনো অ্যাসিড আছে যারা এই কাজটা দারুন করতে পারে।

চন্দন: মনে আছে।

নন্দন: এগোবার আগে একটা কথা বলে রাখি। ২০০২ সালে চীনে সার্স মহামারীর পর থেকে এই সব ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব ব্যাপি গবেষণা শুরু হয়।  তারপর প্রায় ১৮ বছর কেটে গেছে, অনেক অনেক গবেষণা হয়েছে।  বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেছেন কি করে স্পাইক প্রোটিন ACE২ র সঙ্গে লেগে যায়।  যেহেতু দুটোই প্রোটিন, আর প্রোটিন মানেই পরপর সাজানো অ্যামিনো অ্যাসিড, তাই এটা ফাইনালি হল অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে অ্যামিনো অ্যাসিড চেনার মলিকিউলার  খেলা। বিজ্ঞানীরা ন্যাচারাল ভাইরাস প্রোটিন স্টাডি করেছেন, কম্পিউটারে মডেল করেছেন , পরীক্ষা করেছেন যা রিএকশন দেখছেন সেটাই কি ১০০% বেস্ট না কি ইঞ্জিনিয়ারিং করে প্রকৃতির থেকেও বেটার করা যায়।

চন্দন: প্রকৃতির থেকেও better হয় নাকি?

নন্দন: হতেই পারে। বিবর্তন তো ঠিক ইঞ্জিনিয়ার নয়, যে আগে থেকে ভেবেচিন্তে design করে,  বেস্ট মালপত্র দিয়ে বেস্ট জিনিসটাই সবসময় তৈরী করবে । প্রকৃতিতে অনেক কিছুই চলে তাপ্পি দিয়ে।আগে থেকে আছে, একটু variation হল সেটাই selected হল। একে বলে tinkering, জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে দাও, নতুন করে বানাবার দরকার নেই। মানুষ যেটা স্বজ্ঞানে করে সেটা হল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর বিবর্তন হল জোড়াতালি, তাপ্পি দেওয়া tinkerer.

চন্দন : সেটা এক্ষেত্রে কেন ইম্পরট্যান্ট?

নন্দন: এক্ষেত্রে এটা বলা দরকার কারণ বিজ্ঞানীরা এত বছর যখন স্পাইক প্রোটিন নিয়ে গবেষণা করছিলেন তখন বেশ কয়েক বছর আগে এমন একটা স্পাইক ল্যাবরেটরিতে বানিয়ে ফেলেছিলেন যেটা একদম বেস্ট। ওটাই ACE২র  সঙ্গে সবচেয়ে ভাল আটকে যায়। ঠিক যে যে  অ্যামিনো অ্যাসিড দিলে RBD সবচেয়ে ভাল খাপেখাপ লেগে যাবে সেগুলো দিয়েছিলেন, আর ফল ও তেমন পেলেন। যাকে বলে একদম optimized.

চন্দন: তারপর  ?

নন্দন: তাহলে এটা নিশ্চয়ই আশা করা যায় যে যদি কেউ ল্যাবে ওই নতুন কোরোনাভাইরাস বানায় সে ওই ল্যাবে তৈরী বেস্ট স্পাইক নেবে।  তাই তো? স্বাভাবিক। সে তো একটা মারাত্মক বায়োলজিকাল অস্ত্র বানাতে চাইছে , অন্তত তাই তো ডোনাল্ড-ভাই দাবি করছেন।  কিন্তু, বিজ্ঞানীরা দেখলেন নতুন কোরোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের RBD  বেশ ভাল কাজ করে, কিন্তু ওর অ্যামিনো অ্যাসিড গুলো পরিষ্কার আলাদা আর optimized নয়।(ছবি ৭)

চন্দন: তার মানে ওটা ন্যাচারাল, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে তৈরী নয়।?

নন্দন: exactly . যদি ল্যাবে তৈরী হত তাহলে ওই unnatural optimized RBDর মত হত। সত্যি বলতে কি, এমন যে একটা RBD কাজ করতে পারে, আমাদের কম্পিউটার মডেলিং সেটা বের করতেই পারেনি।  কিন্তু বিবর্তনের ক্ষমতা অসীম, মানুষের টেকনোলজি যা পারে না সেটা করে ফেলে। এবারেও পেরেছে।দেখে বিজ্ঞানীরা অবাক - এভাবেও হয় ! এবং এই নতুন ভাইরাস যে ল্যাবে তৈরী নয়, প্রকৃতির ফসল,  এটার পক্ষে খুব বড় প্রমান।

ছবি ৭: কম্পিউটার মডেলিং করে ল্যাবে তৈরী optimized RBD (বাঁদিকে ) আর নতুন কোরোনাভাইরাসের RBD (ডানদিকে) . ACE২ সঙ্গে bind করতে আলাদা আলাদা অ্যামিনো অ্যাসিড  ব্যবহৃত হয়েছে। মানুষের টেকনোলজি আর প্রকৃতি দুটি আলাদা পন্থা নিয়েছে।  Wan, Y. et al (2020)  Journal of Virology. 94, e00127-20 থেকে নেওয়া।  
চন্দন: বাপস ! আশ্চর্য!

নন্দন: সত্যিই আশ্চর্য।  এবং এটাই শেষ নয়।  চার নম্বর বলে শেষ করি - স্পাইক প্রোটিন টা তো বুঝতেই পারছিস প্রোটিন।  কিন্তু ওর সঙ্গে কিছু কার্বোহাইড্রেট লেগে আছে। কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড আছে যারা সেই কার্বোহাইড্রেটগুলোকে বেঁধে রেখেছে।  নিচের ছবিটা দেখ- এদের বলে O-linked glycan residues (ছবি ৮).

ছবি ৮: স্পাইক প্রোটিনে O-linked glycan residuesর অবস্থান।  সেই সব অ্যামিনো অ্যাসিড যারা কার্বোহাইড্রেটদের বেঁধে রাখে। Zhou, H. et al (2020) Current Biology. 30, 1-8 থেকে নেওয়া 
চন্দন: এদের আবার কি কাজ ?

নন্দন: আত্মরক্ষা।  ডিফেন্স।  যখন ভাইরাস আমাদের শরীরে ঢোকে তখন তো সম্ভাবনা আছে যে ওকে আমাদের রোগ প্রতিরোধকারী immune system  চিনে ফেলবে, তাই না।  এই কার্বোহাইড্রেট গুলো হচ্ছে নতুন করোনার camouflage. ওকে চিনতে দে না।  immune system ওকে দেখেও দেখতে পায় না , আর ওই ফাঁকে ও ঢুকে পড়ে। এটাও শুধু নতুন কোরোনাভাইরাসেরই আছে।

চন্দন: এটা আবার কোথা থেকে এল ?

নন্দন: সেটা এখনো ঠিক বেরোয়নি, তবে এটাও নতুন কিছু না।  অনেক ভাইরাসের থাকে।  যেটা আসল কথা সেটা হল এই জিনিস কোনোমতেই ল্যাবে করা যেত না।  এরকম  O-linked glycan residues বিবর্তিত হতে হলে সেই প্রোটিন (বা তার ভাইরাসকে) বেশ কিছুদিন কোন এক বা একাধিক স্তন্যপায়ীর মধ্যে থাকতে হবে।  তবে হবে, এমনি এমনি ল্যাবের টেস্টটিউবে হবে না।

চন্দন: কোন স্তন্যপায়ী?

নন্দন: সেটা এখনো কেউ জানে না।  ওই  O-linked glycan residues কবে নতুন করোনা পেল সেটা জানা যায়নি।  তবে বাদুড়, মানুষ, প্যাঙ্গোলিন সবই তো mammal. কারুর না কারুর মধ্যে অবস্থান কালে কোন একটা ভাইরাস এটা  পেয়েছিল।  আর যে পেয়েছে তার অ্যাডভান্টেজ, কারণ তাকে immune system মারতে পারে না, তাই তার বংশ বৃদ্ধি বেশি হয়, তাই সে এখন ছড়িয়ে পড়ছে। বলছি, না বিবর্তনের ক্ষমতা অসীম।  ৪০০ কোটি বছর ধরে এই ভাঙা গড়া খেলা চলছে ভাই।  মানুষ আর কতটুকু করেছে, মানুষও তো ওই খেলারই ফল।  করোনার মত।

চন্দন: আর কিছু ?

নন্দন: আরো কিছু প্রমান আছে।  তবে থাক। এই অনেক।  তাছাড়া উহানের ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি পৃথিবীর অন্যতম নামকরা গবেষণাগার।  সারা পৃথিবীর লোক ওখানে collaboration এ কাজ করতে যান।  ওটা বানাতে মার্কিন এবং ফ্রেঞ্চ গবেষকদের হাত আছে।  সেই জায়গায় কেউ কোনোদিন কোন সন্দেহ করেনি, এত বিদেশী কাজ করেছেন অথচ কেউ কোনোদিন কিছু সন্দেহজনক রিপোর্ট করেনি।  ওখানে লুকিয়ে জৈবিক অস্ত্র গবেষণা হবে এসব গাঁজা। তাছাড়া একটা অস্ত্র তখনই ভাল যখন সেটা কন্ট্রোল করা যায়।  দেখতেই তো পারছিস নতুন ভাইরাস কিরকম একটার পরে একটা দেশ ঘায়েল করে দিচ্ছে।  টোটাল-ক্যালানে না হলে এমন অস্ত্র কেউ বানিয়ে সেমসাইড খেতে যায়?!  ওসব আষাঢ়ে গপ্পো, হলিউডের সিনেমায় চলে।

চন্দন: তা বটে।  তাছাড়া একটা কথা আমি অনেক ভেবেছি। চাপাচাপি করতে হলে চীন করতেই পারতো।  ওদের এক-পার্টি শাসক দেশে সেটা করাও যায়।  কিন্তু, চীনের বিজ্ঞানীরা জানুয়ারি মাসেই এই জিনোম ডেটা সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের দিয়ে দিয়েছেন, তাই নিয়েই সবাই কাজ করছে।

নন্দন: মোক্ষম দিয়েছিস।  এটা কখনো হতে পারে নিজেরা ভাইরাস বানাবো, আবার সেই ভাইরাসের জিনোম - অর্থাৎ ব্লুপ্রিন্ট - সারা পৃথিবীতে বিলিয়ে দেব ???   পাগল না কি?  ....দেখ, শেষ কথা হল , একদিকে কোনো প্রমান নেই।  অন্যদিকে জীবন বিজ্ঞানের দেড়শো বছরের সম্মিলিত জ্ঞান। আমি যা জানি মোটামুটি অনেক তথ্য তোর সামনে রেখেছি। এবার  কোনটা বিশ্বাস করবি সেটা তোর ব্যাপার।

চন্দন: সে আর বলতে।  ....তবে মানুষের কি কোন হাত নেই?

নন্দন: আছে আছে, নিশ্চয়ই আছে।  সত্যি বলতে কি , কম বেশি আমরা সবাই দোষী। এই যে ভয়ানক পরিবেশ দূষণ চলছে, বন্যপ্রাণী অবাধে চোরা শিকার চলছে, বনের পরে বন কেটে সাফ হয়ে শহর হচ্ছে এই সবকিছুর ফলে আজকে আমাদের সঙ্গে অনেক বেশি জন্তু জানোয়ারদের দেখা হচ্ছে।  হবেই তো, দোষ তো ওদের নয়।  আমরাই তো ওদের বাড়ি ঘর ভেঙে দিয়েছি। কত প্রাণী গত কুড়ি বছরে নিশ্চিহ্ন হয়েছে বল তো ? পুরোনো গবেষণা পত্র, সেমিনারের বক্তৃতা খুলে দেখ,  বিজ্ঞানীরা ১০-১৫ বছর ধরে বলে আসছেন এভাবে চললে নতুন মহামারী অতিমারী আসবেই, কেউ কথা শুনিনি। বিপদ এসেছে। এখন অবস্থা টাইট। আবার তার মধ্যেও নিজেদের বদমাইশি চালু রেখেছি।

চন্দন: আর সমস্যা তো ঠিক অসুখের নয়।  .....

নন্দন: নয় তো। এর থেকে আমাদের যক্ষা, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া অনেক ডেঞ্জারাস। এই অসুখে তো ৯৫% লোক সেরে যায়।  সমস্যা তো মূল অসুখ নিয়ে নয়,  সমস্যা হচ্ছে গত ২০-২৫ বছরে বহু দেশ সহজলভ্য পাবলিক হাসপাতাল কমিয়ে প্রাইভেট বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে বেড কমে গেছে - শুধু আমাদের দেশে নয়, জার্মানি ছাড়া প্রায় পুরো ইউরোপে এই প্রাইভেটগিরি করতে গিয়ে হয়েছে; আমেরিকার কথা তো বাদই দে, চিরকালই সাস্থের ব্যাপারে বাজে ।  এখন বোঝো ঠ্যালা।  বিপদের দিনে বেড নেই, ভেন্টিলেটর কম।

চন্দন: এসব তো মানুষের অপরাধ বটেই।

নন্দন: ঠিক মানুষ বলব না। আমাদের ভয়ানক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লোভ।  যা মানুষকে মানুষ জ্ঞান করে না। যা ভুলে যায় যে আমরা টেকনোলজি'র দিক থেকে অনেক উন্নতি করলেও এখনো প্রকৃতির মধ্যেই আছি।বলতে প্যারিস, করোনা'র মাধ্যমে এ যেন প্রকৃতি আমাদের একটা হালকা টোকা মেরে গেল - বলে দিল, ওহে মানুষ, তোমরা আমার মধ্যেই আছো, আমার মধ্যেই থাকবে।



REFERENCES

(তিন কিস্তির এই রচনা লিখতে বেশ কিছু গবেষণা পত্র থেকে মালমশলা নিতে হয়েছে। তলায় তাদের লিস্ট করে দিলাম। মনে রাখবেন নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য আসতেই পারে, বিশেষত প্যাঙ্গোলিন না হয়ে অন্য কোন প্রাণীও হতে পারে। )

1. Anderson KG et al (2020) The proximal origin of SARS-CoV-2. Nature Medicine. 26, 450-452.

2. Wan, Y. et al (2020) Receptor Recognition by the Novel Coronavirus from Wuhan: an Analysis Based on Decade-Long Structural Studies of SARS Coronavirus. Journal of Virology. 94, e00127-20

3. Zhou, P. et al (2020) A pneumonia outbreak associated with a new coronavirus of probable bat origin. Nature. 579, 270-273.

4. Zhang, T. et al (2020) Probable Pangolin Origin of SARS-CoV-2 Associated with the COVID-19 Outbreak. Current Biology. 30, 1-6.

5. Xiao, K. et al (2020) Isolation of SARS-CoV-2-related coronavirus from Malayan pangolins. Nature. online ahead of print in May 2020.

6. Zhou, H. et al (2020) A novel bat coronavirus closely related to SARS-CoV-2  contains natural insertions at the S1/S2 cleavage site of the spike protein. Current Biology. 30, 1-8.

7. Wrapp, D. (2020)  Cryo-EM structure of the 2019-nCoV spike in the prefusion conformation. Science. 367, 1260-1263.

8. Zhang, Y. and Holmes, E. (2020) A Genomic Perspective on the Origin and Emergence of SARS-CoV-2. Cell, 181, 1-5.

9. https://leelabvirus.host/covid19/origins-part1; https://leelabvirus.host/covid19/origins-part2; https://leelabvirus.host/covid19/origins-part3 নিউ ইয়র্কের ইক্যাং স্কুল অফ মেডিসিন, মাউন্ট সিনাইয়ের প্রফেসর বেনহুর লি ল্যাব এই বিষয়ে বেশ সহজের সঙ্গে লিখেছেন। পড়া উচিত।

10. https://microbenotes.com/differences-between-antigenic-shift-and-antigenic-drift/














No comments:

Post a Comment

 স্কুল খুলুক, সঙ্গে হাওয়া বাতাস খেলুক ক্লাসঘরে ('এই সময়' সংবাদপত্রে প্রবন্ধ -  ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২১)      সোজাসাপ্টা অপ্রিয়   সত...